বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র্র সৈকতগামী পর্যটকদের ভোগান্তি

বশির উল্লাহ বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ

কল্যাণ বড়ুয়া, বাঁশখালী | শনিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর অপার সম্ভাবনাময় উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতে যাতায়াতকারী পর্যটকদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজার বেইলি ব্রিজটির কারণে। বর্তমানে এ ব্রিজ দিয়ে গাড়ি পারাপারে ঝুঁকি ও ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করায় অনেকটা হতাশ হতে হচ্ছে পর্যটকদের। সমুদ্র সৈকতগামী কালীপুর ইউনিয়নের সলিহা বর পুল থেকে বশির উল্লাহ মিয়াজী ব্রিজ হয়ে সমুদ্র উপকূলে যাওয়ার সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু হলেও এখনও সে কাজ শেষ না হওয়াতে এবং বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজার বেইলি ব্রিজটির পাঠাটন নষ্ট হয়ে যাওয়াতে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীসহ পর্যটকদের।

বাঁশখালীর দেশের অন্যতম এ দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে সুদীর্ঘ সময় ধরে পর্যটন স্পর্ট বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিনিধিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এসে ঘুরে গেলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগে নেওয়া হয়নি। অপরদিকে এ সমুদ্র সৈকতে গমনের দুটি সড়ক কালীপুরের সলিহা বর ফুল হয়ে বাহারছড়া সৈকতে এবং গুনাগরী কথাসাহিত্যিক আহসাব উদ্দিন সড়ক হয়ে বাহারছড়া ও খানখানাবাদ হয়ে সমুদ্র সৈকতে গমনের সড়ক দুটি অধিকাংশ এলাকায় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কারণে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।

সারি সারি ঝাউবন আর সুদীর্ঘ বেড়িবাঁধের উপর এ সমুদ্র সৈকত যে কারো মন কাড়ে। কক্সবাজার, পতেঙ্গা বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্বল্প পরিচিত সমুদ্র সৈকতও রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হল চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। বালুময় বেলাভূমি এবং ঝাউবনে ঘেরা বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত বলা যেতে পারে। এটি ছনুয়া, গন্ডামারা, বাহারছড়া, সরল, খানখানাবাদও কাথরিয়া উপকূল মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত নির্জনতা পছন্দকারী প্রেমীদের জন্য এক আদর্শ স্থান। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বা দলবেঁধে বিচ ফুটবলে মেতে উঠার আনন্দ ভ্রমণকারীদের দেয় এক অপার্থিব পূর্ণতা ও আনন্দ। নির্জন এই সাগর সৈকতে নিরাপত্তার মোটেও অভাব নেই। এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা এখানে কক্সবাজারের মত ফটোগ্রোফার, চেয়ার দখলকারী ও হকারদের উৎপাত না থাকলেও বর্তমানে বেশ কিছু দোকানপাঠ গড়ে উঠেছে। যেখানে ইচ্ছে নিজের মত করে ঘুরে বেড়ানো যায়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরেকটু উন্নত হলে এবং বড় গাড়ি করে এখানে আসার সুযোগ হলে প্রচুর লোক সমাগম হবে।

বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা তাফহীমুল ইসলাম বলেন, বাঁশখালীর উপকূলীয় সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করলে পর্যটকদের জন্য সুবিধা হবে। তবে তিনি বাইকারদের উৎপাত নিরসনে প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান।

গাড়িচালক জসীম জানান, বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজারের বেইলি ব্রিজটির বার বার পাঠাটন নষ্ট হয়ে যাওয়াতে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে এ ব্রিজটি সংস্কার করলে গাড়ি চলাচলে ভোগান্তি কমতো বলে তিনি জানান।

বাজারের ব্যবসায়ী কলিম উদ্দিন আপন বলেন, বাজারের এ ব্রিজটির বার বার পাঠাটন নষ্ট হয়ে ভোগান্তি পড়তে হয়। আর যে সব পর্যটক না জেনে বড় গাড়ি নিয়ে আসে তাদের আরো বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের স্বার্থে এ ব্রিজটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ২৮ ফেব্রয়ারি ‘চট্টগ্রাম বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির’ সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বাঁশখালীর বাহারছড়া ও খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকত এলাকায় ট্যুারিস্ট পুলিশ মোতায়ন করার নির্দেশ দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে পর্যটন এলাকার বেড়িবাঁধের উপরে অযথা যত্রছত্র গড়া উঠা দোকান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকা সব মিলিয়ে বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র এলাকার প্রতি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রত্যাশা করে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বলেন, ব্রিজটি সংস্কারে অচিরেই কাজ শুরু করা হবে। আর রাস্তার বেশ কিছু অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী অংশের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবসবাসের উপযোগী হতে পারে শ্বেত বামন গ্রহও : নাসা
পরবর্তী নিবন্ধপূর্ব বাকলিয়ায় বিএনপির ৩১ দফা প্রচারণার লিফলেট বিতরণ