বাঁশখালীতে সাবেক ইউপি সদস্য খুন

দুই পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে সন্ত্রাসীরা

বাঁশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ২০ মার্চ, ২০২১ at ৪:১৮ অপরাহ্ণ

বাঁশখালী উপজেলার পরিবেশ হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠেছে। মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে উপজেলার চাম্বল, পুকুরিয়া ও বাহারছড়াতে পৃথক ঘটনায় ৩ জনকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় শংকিত হয়ে পড়েছে সাধারণ জনগণ।
গতকাল শুক্রবার (১৯ মার্চ) গভীর রাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছাপাছড়ি গ্রামের মৃত আবদুল ছালাম তালুকদারের পুত্র আবুল বশর তালুকদার (৪৮) বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে তার উপর হামলা চালিয়ে দুই পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় জনগণ তাকে উদ্ধার করে কালীপুরে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
আজ বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত আবুল বশরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চমেকে প্রেরণ করা হয় এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।
জানা যায়, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছাপাছড়ি গ্রামের আবুল বশর তালুকদার এলাকার বিভিন্ন সালিশ-বিচার করতেন এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী ছিলেন। তা নিয়ে কিছু মানুষ তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল।
শুক্রবার গভীর রাতে সামাজিক কাজ সেরে বাড়ির অদূরে পৌঁছালে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তার উপর হামলা চালিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষত-বিক্ষত করার পাশাপাশি তার দুই পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলে।
তাকে স্থানীয় জনগণ উদ্ধার করে কালীপুরে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেছে সেখান থেকে আশংকাজনক অবস্থায় চমেক নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিচার করছে।
এদিকে, এর আগে গত ১৬ মার্চ রাতে বাঁশখালী চাম্বল বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৩৫) দোকান শেষে বাড়ি ফেরার পথে দৃষ্কৃতকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতে ১৮ মার্চ রাতে চাচাতো ভাইরা হামলা করে পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে পুকুরিয়ার ছাবের আহমদের(৪৫)।
তিনি পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং খন্দকার পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মাবুদের পুত্র। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শুক্রবার বিকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত ছাবেরের পরিবারের লোকজন জানান, আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে আগামীকাল রবিবার বিকালে নিজ বাড়ি পুকুরিয়ায় তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
চাম্বলের নুরুল ইসলাম (৩৫) হত্যাকাণ্ডে তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে, পুকুরিয়ার ছাবের আহমদ হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আমেনা খাতুন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়েরের পর পুলিশ দেলোয়ারের পুত্র মো. হাসানকে(১৯) গ্রেপ্তার করে।
তিনটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পুকুরিয়ার ছাবের আহমদের উপর হামলাকারীরা তার দুই পায়ের গোড়লি কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। একইভাবে বাহারছড়ার আবুল বশরের উপর হামলাকারীরা তার দুই পা বিছিন্ন করে দেয়।
এ দুইজনের মৃত্যু অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণের কারণে হয়েছে বলে স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা যায়।
পুকুরিয়ার ছাবের আহমদের লাশের নামাজে জানাযা রবিবার বিকালে হবে বলে পরিবার সুত্রে জানা গেলেও বাহারছড়ার আবুল বশরের নামাজে জানাযা কখন হবে তা জানাতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা।
আবুল বশর তালুকদারের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া জরুরি।”
তিনি আবুল বশর প্রতিবাদী ও ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, “নিহত আবুল বশরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে এবং পুলিশ এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।”
অধিকাংশ ঘটনা পারিবারিক ও জায়গা সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে সংঘটিত। পৃথক ৩ ঘটনার মধ্যে ২টি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এদিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাহারছড়ার আবুল বশর হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে থানা সূত্রে জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপোষ্যদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতি শনিবার বুফে ব্রাঞ্চ পেনিনসুলার লেগুনায়