বাঁশখালীর কালিপুরের লিচুর কদর বাড়ছে। যখন লিচুর মৌসুম শুরু হয় তখন চট্টগ্রামের মধু ফলের সন্ধানীরা কালীপুরের লিচু একবারের জন্য হলেও স্বাদ নিতে চেষ্টা করেন। এছাড়া বৈলছড়ি, সাধনপুর, পুকুরিয়া, জঙ্গল জলদি, জঙ্গল চাম্বল, পুঁইছড়িসহ প্রত্যেক ইউনিয়নেই পাহাড়ি এলাকায় একই সাথে সমতলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে আগে থেকেই।
স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এ লিচু দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে। বাঁশখালীর প্রবাসীরা তাদের মালিকের জন্যও নিজেদের জন্য নিয়ে যায়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকা–মাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় বাঁশখালীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বৃষ্টি কম হলেও নানা কৌশলে গাছে পানি দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেছে বলে জানান অনেক চাষি। তবে দুই একবার বৃষ্টি হওয়ায় নানাভাবে উপকার হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম নামে এক চাষি।
এবার বাঁশখালী উপজেলা জুড়ে ৭৬০ হেক্টর বাগানের লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক। তিনি জানান, গত মৌসুমে ৭২০ হেক্টর বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছিল। এ বছর প্রতি হেক্টরে বীজের গাছ লাগানো হয়েছে ২১০–২২০টা। কলমের নতুন জাতের চারা প্রায় ২৬০টা।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরেই বাঁশখালী উপজেলায় লিচুর খুব ভালো ফলন হয়ে আসছে। সে কারণে এবারো গত বছরের ন্যায় কালিপুরের লিচু বিক্রির প্রত্যাশা করা হচ্ছে শত কোটি টাকার ওপরে। গত বছর বাজারে প্রতি ১০০ লিচু ২৫০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে প্রতি হাজার পাইকারি লিচু বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া শুধু কালিপুরের ৩০০ হেক্টরসহ পুরো উপজেলায় সাড়ে ৭৬০ হেক্টর বাগানে স্থানীয় জাত কালিপুরের লিচু উৎপন্ন হয়। স্থানীয় জাতের লিচুর পাশাপাশি উন্নত জাতের লিচু যেমন বোম্বাই, চায়না ৩, মোজাফফরী চাষ দিন দিন বাড়ছে। আবহাওয়া শুষ্ক ও ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। বাঁশখালী কালিপুরের লিচু অনেকটা দিনাজপুরের লিচুর মতো হলেও এটি আকারে একটু ছোট। কিন্তু স্বাদে অতুলনীয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। লিচুতে রঙ ধরেছে কোন কোন বাগানে। উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালিপুর হয়ে বৈলছড়ি পর্যন্ত ৪–৫ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে সড়কের পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পাহাড় ও লোকালয়ের বাগানে এখন শুধু লিচু আর লিচু। তাছাড়া উপজেলার পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে পুকুরিয়া, সাধনপুর, বৈলছড়ি, পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বল, পৌরসভার জলদীতেও বাগানে বাগানে প্রচুর পরিমান লিচু শোভা পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, এবার চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল ও লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমী ফলের মধ্যে কালীপুরের লিচু স্পেশাল একটি ফল। এখানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষাবাদ হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লিচু বাগানীদের সহযোগিতা করেছি। এ বছর ৭ শত ৬০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে আগাম চাষিদের কিছু কিছু লিচু আসতে শুরু হলেও পুরোদামে আসবে সপ্তাহের মধ্যে।