বাঁশখালীতে দেদারছে চলছে মাটিকাটা এবং অবৈধ বালু উত্তোলন। পাহাড় ও ফসলি জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে অবাধে। বাঁশখালী পৌরসভার জলদীসহ উপজেলার পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, বৈলছড়ি, কালীপুর, সাধনপুর ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে চলছে পাহাড় কাটা, মাটিকাটা এবং বালু উত্তোলন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অবৈধ কার্যক্রম চললেও প্রশাসন নির্বিকার।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে উত্তর জলদী ৪নং ওয়ার্ড ছুম্মাপাড়া সংলগ্ন সুপারিকাটা এলাকায় পাহাড়ি ছড়ায় স্ক্যাভেটর দিয়ে দিনে-রাতে মাটিকাটা ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের বাড়িঘর ও সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুইছড়ি প্রেমবাজারের দক্ষিণে প্রধান সড়কের উভয় পাশে ৩-৪টি স্ক্যাভেটর ও ২০-২৫টি ডেম্পার ট্রাক প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ফসলি জমির টপসয়েল কাটার মহোৎসবে নামলেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই।
সরেজমিনে পুঁইছড়ির ওই এলাকায় পুলিশের গাড়িও টহলরত অবস্থায় দেখা গেছে। মাটির ট্রাকগুলোর নিরাপত্তায় ২০-২৫ জন মোটরসাইকেল আরোহীকে দেখা গেছে। সাংবাদিকের আগমন টের পেয়ে নানা হুঙ্কার দেখান মাটিকাটায় নিয়োজিত স্ক্যাভেটর ও ট্রাকের নিরাপত্তায় থাকা যুবকরা।
কালীপুর ইউনিয়নের ছলিয়ার বাপের পুল এলাকায় সড়কের পাশের ছড়া থেকে প্রতিনিয়িত বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। আগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা ওই ছড়া থেকে বালি উত্তোলন করলেও এখন হাত বদল হয়ে নতুন সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করছে।
তাছাড়া খানখানাবাদ ইউনিয়নের ইশ্বরবাবুর হাট, সাধনপুর সওদাগরপাড়া, সাহেবের হাটের পূর্বে পাহাড়ি ছড়া, বাণীগ্রাম বাজারের পশ্চিম পাশের ভূমি অফিস সড়ক সংলগ্ন পাহাড়ি ছড়া, পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া, মোনায়েমশাহ বাজারের পশ্চিম পাশে জুইদন্ডি ঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে বালু উত্তোলন। অপরদিকে বাণীগ্রামের পূর্বপাশের পাহাড়ে, গুনাগরীর পূর্বের পাহাড়, উপজেলা সদরের পূর্বে দিঘীরপাড় সংলগ্ন একাধিক পাহাড়, উত্তর জলদী ৪নং ওয়ার্ড এলাকার পাহাড়, চাম্বল, গণ্ডামারা, সরলে ফসলি জমির টপসয়েল, পুঁইছড়িতে পাহাড়ি মাটি কাটা হচ্ছে দেদারছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জলদীর নুরুল আলম জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তৎকালীন একটি সিন্ডিকেট পৌরসভা এলাকায় পাহাড়ি মাটি কাটত। সরকার পরিবর্তনের পর কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে মাটিকাটার ব্যবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।
পুঁইছড়ি এলাকার আবদুর রহিম জানান, পুঁইছড়িতে জেলফেরৎ কিছু ডাকাত সন্ত্রাসী ও একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা মিলেমিশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই মাটি কাটছে।
বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, অবৈধভাবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। পুঁইছড়িতে রাতের আঁধারে যারা মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধেও শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জামশেদুল আলম জানান, মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। ইতিমধ্যে প্রতিদিন স্কেভেটর, ডাম্পারসহ মাটিকাটার সরাঞ্জাম জব্দ কিংবা জরিমানা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।