বাঁশখালীতে এখনও শেষ হয়নি বেড়িবাঁধের কাজ

৩২ বছর পরেও স্বজন হারানোর শোক

বাঁশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড়ের ৩২ বছর পার হলেও বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ স্বজন হারানোর স্মৃতি আজো ভুলতে পারেনি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। প্রাণহানি ঘটে অসংখ্য গবাদিপশুর। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধটি। প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল এলেই উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে সেই স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে এবং হারানো স্বজনদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় বিভিন্নস্থানে।

উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে সেদিন হতাহত বেশি হয়। ২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ৩শত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ছনুয়া ছাড়া অন্যান্য এলাকায় কাজ বাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। অপরদিকে খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া ও কদমরসুল এলাকায় নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণে শুরু থেকে নিম্নমানের কাজ করাসহ নানা অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। সব মিলিয়ে এখনও সে কাজের পরিসমাপ্তি ঘটেনি। তবে বেড়িবাঁধ হওয়ায় এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তেমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটে না।

উপকূলীয় ছনুয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘৯১এর ঘূর্ণিঝড়ে আমার পরিবারের ১১ সদস্যকে হারিয়েছি। আমার পরিবারে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল আসলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।’ কোনও মতে ভুলতে পারি না তাদের। একই কথা বলেন গন্ডামারার আবুল বশর। সেই ঘূর্ণিঝড়ে তার পরিবারের তিন সদস্য মারা গেলেও লাশ খুঁজে পাননি। ২৯ এপ্রিল তার জীবনে এক আতংকের নাম।

৯১এর ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল ছনুয়া গন্ডামারা, বাহারছাড়া, খানখানাবাদ, সরল সহ উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোতে।

খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, জোয়ারের পানি ঠেকাতে খানখানাবাদের ঈশ্বরবাবুর হাট থেকে খানখানাবাদ পর্যন্ত রিং বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খানখানাবাদের কদমরসুল, প্রেমাশিয়া, মৌলভীপাড়া এলাকার বাঁধ এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কদমরসুল এলাকায় ঝাউবাগানের ফলে বাঁধ রক্ষা হলে ও পূর্ণিমা অমাবস্যার জোয়ারে অনেক সময় পানি প্রবেশ করে। তাছাড়া যে সব এলাকায় বাঁধ করা হয়েছে তার বেশ কিছু এলাকায় ব্লক ধসে গেছে বলে তিনি জানান।তিনি বলেন, সব মিলিয়ে খানখানাবাদের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ চেইন বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন।

ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.হারুনুর রশিদ বলেন, আমার ইউনিয়নটি সমুদ্র বেষ্টিত। ইউনিয়নের ২৭কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র তিন কিলোমিটার ব্লক বসানো হয়েছে। ছনুয়ার টেক, সেলবন, মধুখালী, মৌলভী পাড়া সহ বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে নানা সময় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।

বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ’৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়েছিল। বর্তমান সরকার স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। কাজ শেষ হলে উপকূলীয় জনগণের ভাগ্য খুলে যাবে।

এদিকে ২৯ এপ্রিল স্মরণে আজ বাঁশখালীতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দোয়া ও মিলাদ মাহফিল সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বেড়িবাঁধের কাজ
পরবর্তী নিবন্ধছিনতাইয়ের টাকায় কক্সবাজার ভ্রমণ