বাঁধ কাটা পানিতে বসতঘর হারানো ৫৬ পরিবারের দিন কাটছে যেভাবে

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাতকানিয়া | শনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ালোহাগাড়ার সীমান্তবর্তী সোনাইছড়ি খালের মুখে প্রভাবশালীদের দেয়া অবৈধ বাঁধ বন বিভাগ অপরিকল্পিত ভাবে কেটে দেয়ায় পানিতে বসত ঘর হারানো মানুষগুলো পরিবারপরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর দিনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। তারা দিনের বেলায় ভাঙ্গা ঘরের মাটির নিচ থেকে চাপা পড়া জিনিসপত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আর রাতের বেলায় পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। কেউ প্রতিবেশীর ঘরে রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ কনকনে শীতে পলিথিন টাঙিয়ে তৈরি তাঁবুতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ঘরের সব জিনিসপত্র মাটির নিচে চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা এখনো খাবার তৈরি করতে পারছে না। ফলে কেউ কেউ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের ঘর থেকে আনা খাবার খাচ্ছে। ৫৬টি পরিবার মাথা গোঁজাবার ঠাঁই হারানোর এক সপ্তাহ পার হতে চললেও তাদের কাছে পৌঁছেনি উল্লেখযোগ্য কোনো সাহায্য সহযোগিতা।

উল্লেখ্য, সোনাইছড়ি খালের মুখে অবৈধভাবে দেয়া বাঁধ গত শনিবার রাতে হঠাৎ করে কেটে দেয়ায় পানি প্রবেশ করার ফলে সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সাইরতলী, আচারতলী, কুতুব পাড়া, মঙ্গল চাঁদ পাড়ার ৫৬টি বসত ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়। এছাড়াও বাঁধ কাটা পানিতে প্রায় শতাধিক বসত ঘর আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত ঘরের মধ্যে অধিকাংশই মাটির তৈরি গুদাম ঘর।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পানিতে বসতঘর হারানো মানুষগুলোর চোখে মুখে হতাশার চাপ। তারা এখন ভাঙা ঘরের মাটি সরিয়ে হারানো জিনিসপত্র বের করার চেষ্টা করছে। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত জিনিসের অধিকাংশই ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। যাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নিতারাও ঘরে থাকতে পারছে না। কারণ এসব ঘরের তলায় এখনো কাদামাটিতে ভরা।

সাইরতলী এলাকার বসতঘর হারানো ছাবের আহমদ জানান, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে বসেছিলাম। ঠিক ওই সময় ঘরে পানি প্রবেশ করে। তখন সবাই খাবারের প্লেট রেখে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। নিমিষের মধ্যে বুক সমান পানি হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ভেঙে গেছে পুরো ঘর। ঘর থেকে একটি জিনিসও বের করতে পারিনি। নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ ঘরের সব জিনিসপত্র মাটির নিচে চাপা পড়েছে। ঘটনার দিন বিকালে আনা চাউলের বস্তাটা পর্যন্ত বের করতে পারিনি। ওই চাউল থেকে এখন পচা গন্ধ উঠছে। গোলা ভর্তি ধান ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে মাটি সরিয়ে চাপা পড়া জিনিসগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। কিন্তু যেটা উদ্ধার করছি সেটাই নষ্ট। মাটি নিচে চাপা পড়া কোনো জিনিসই ভাল নাই। ঘরের আশপাশের জায়গা গুলোও এখনো কাদায় ভরা। এখনো খাবার রান্না করতে পারছি না। আত্মীয়স্বজনরা নিয়ে আসলে সেই গুলো খাই। না হলে হোটেল থেকে কিনে এনে কোনোভাবে খেয়ে নিই। আবার কোন বেলায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। শুধু ঘর নয়, বিলের আলু, মরিচ ও বেগুন খেত গুলোও এখন কাদামাটির নিচে। বাঁধ কাটা পানি আমাদেরকে ফকির করে দিয়েছে।

একই এলাকার জাফর আহমদ জানান, অনেক ধারদেনা করে গত বছর ঘর তৈরি করেছিলাম। ঘর তৈরির জন্য করা ঋণ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। এর মধ্যেই বসত ঘর ভেঙে গেছে। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, খালের মুখে যারা বাঁধ দিয়েছে তারা এক অপরাধ করেছে। আবার যারা কোনো ধরনের ঘোষনা ছাড়া রাতের আঁধারে অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ কেটে পানি ছেড়ে দিয়েছে তারা আরো বেশি অপরাধ করেছে। ফলে অবৈধ বাঁধ তৈরি এবং অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ কাটার সাথে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

শুধু ছাবের আহমদ এবং জাফর আহমদ নয়, বাঁধ কাটা পানিতে বসত ঘর হারানো সব মানুষই এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। সবার মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আমরা প্রাথমিক ভাবে ৩ মেট্রিক টন চাউল ও ২ শত পিস কম্বল বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। আমরা বসত ঘর হারানো পরিবার গুলোর জন্য ডেউটিন বরাদ্দ চেয়েছি। তবে আমরা এখনো কোনো বরাদ্দ পাইনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে প্লাস্টিক গণতন্ত্র চায় ভারত : রিজভী
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নির্বাচনের পার্থক্য নিয়ে যা বললেন কাদের