বাঁচার অধিকার হারাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা : জাতিসংঘ

নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে ‘নিরাপত্তা জোন’ অজুহাতে রাফা দখলে নিয়েছে ইসরায়েল

| শনিবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রতিদিনই প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য নারী ও শিশুর। এই ভয়াবহ মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলের চলমান হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি ফিলিস্তিনিদের জাতিগত অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গতকাল শুক্রবার জানান, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে গাজায় ২২৪টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে অন্তত ৩৬টি হামলায় নিহত হয়েছেন কেবল নারী ও শিশু।

তিনি বলেন, গাজায় মানুষ শুধু প্রাণ হারাচ্ছেন না, তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই, খাবার, পানিসবকিছুর জন্য হাহাকার করছেন। এমনকি যেসব জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। শামদাসানি জানান, ৬ এপ্রিল দেইর আলবালাহ শহরের একটি আবাসিক ভবনে হামলায় এক শিশু, চার নারী ও চার বছর বয়সী এক ছেলে নিহত হন। আর ১১ এপ্রিল ভোরে খান ইউনুসে এক পরিবারের ১০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু।

নিরাপদ আশ্রয়ও আর নিরাপদ নয় : ইসরায়েল বারবার গাজার মানুষকে নির্দিষ্ট এলাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, সেসব এলাকাও হামলার বাইরে থাকছে না। উদাহরণ হিসেবে আলমাওয়াসি এলাকার কথা বলা হয়, যেখানে ১৮ মার্চের পর থেকে শরণার্থী তাবুতে অন্তত ২৩ বার হামলা হয়েছে। ৩১ মার্চ রাফাহ শহরের বাসিন্দাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এরপরই সেখানে শুরু হয় স্থল অভিযান, যা এখনো চলছে। খবর বাংলানিউজের।

চিকিৎসা সংকট, পানিখাদ্যের অভাব : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে চিকিৎসা সেবা। অন্যদিকে, বিশুদ্ধ পানির জোগানও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানায় গাজা সিটি কর্তৃপক্ষ। শহরটির মুখপাত্র হুসনি মহানা বলেন, আমরা এখন পানির ভয়াবহ সংকটে আছি। পরিস্থিতি দ্রুত না বদলালে সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে : গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮৮৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের দাবি, এই সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মানুষ চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত পাওয়ার আশা ক্ষীণ।

এই যুদ্ধ, প্রতিদিনের মৃত্যু আর চোখের জলের মাঝে এখন গাজার মানুষের জীবনে শুধু একটাই প্রশ্ন আমরা কোথায় নিরাপদ?

নিরাপত্তা জোন’ অজুহাতে রাফা দখলে নিয়েছে ইসরায়েল : গাজার রাফা শহরে ‘নিরাপত্তা জোন’ তৈরির নামে আবারও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরই মধ্যে রাফা ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ট্যাংক ও বুলডোজার নিয়ে একের পর এক ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পুরো গাজা উপত্যকা ক্রমান্বয়ে দখল করা হবে। তিনি দাবি করেছেন, গাজার গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকাও এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলিবিয়া থেকে আরো ১৬৭ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন