বাঁকে বাঁকে মৃত্যু ফাঁদ!

ফাঁসিয়াখালী-লামা সড়ক ফের দুর্ঘটনায় আহত ১৪

লামা প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ফাঁসিয়াখালী-লামা সড়ক। উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়কের বাঁকে বাঁকে যেন মৃত্যু ফাঁদ। যাত্রীবাহী বাস ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে হতাহতের একদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও যাত্রীবাহী জিপ দুর্ঘটনায় চালকসহ ১৪জন আহত হয়েছেন। নতুন চালকদের জন্য এ সড়কটি অত্যন্ত বিপদ সংকুল। মুহূর্তের অসর্তকতায় কয়েকশত ফুট গভীর পাহাড়ি খাদে পড়ে জান-মাল বিপন্ন হতে পারে। সড়কের নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা লাগবে গুরুত্বপূর্ণ এ পাহাড়ি সড়কটি প্রশস্ত করার দাাব জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া হাঁসের দীঘি থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাঁসিয়াখালী-লামা-আলীকদম সড়ক। দেশের অপরাপর স্থানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলার মানুষ এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকে। আশির দশকের শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর ইসিবি শাখা এ সড়কটি নির্মাণ করে। ১৯৮৯ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সড়কটি উদ্বোধন করেন। ১৯৯০ সালের দিকে সেনাবাহিনী সড়কটি বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিকট হস্তান্তর করে। তখনকার তুলনায় বর্তমানে এ সড়কে যান চালাচল বেড়েছে বহুগুণ। সে অনুযায়ী সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি। সড়কটির রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের বাস্তবমুখি পরিকল্পনার অভাবে সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে সড়কের হাঁসের দীঘি থেকে লামা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ২০টির অধিক ভাঙন কবলিত এলাকা দেখা যায়। এছাড়া অসংখ্য স্থানে রয়েছে ঝঁকিপূর্ণ বাঁক। সেই সাথে রয়েছে বাঁক গুলোতে প্রয়োজনীয় প্রশস্ততার অভাব। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে আলীকদম সেনা জোনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
এক বেসরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত তিন বছরে সড়কের ভাঙন কবলিত এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দেড় শতাধিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এসকল দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং কয়েকশত যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। সব শেষে গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি মাদানী নগর এলাকায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় এক চালক নিহত এবং প্রায় অর্ধশত যাত্রী আহত হয়েছে।
জানা গেছে, ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের মধ্যে হাঁসের দীঘি থেকে লামা অংশের ২৩ কিলোমিটারের মধ্যেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সড়কের এ অংশের পশ্চিম লাইনঝিরি, মাদানী নগর, মিরিঞ্জা, নয় মাইল, বদুঝরি, ইয়াছা মোড়, ছয় মাইলের মাথা এসকল এলাকায় রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এসকল বাঁকেই প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।
লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের পরিবহন (জিপ) মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সময় ঝুকিপূর্ণ বাঁকের পরে পাহাড়ি ঢালুর বিষয়টি নতুন চালকরা আন্দাজ করতে না পেরে দুর্ঘটনায় পড়েন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো কেটে সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জানান।
বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী পুনেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, সড়কটি ২৪ ফুট প্রশস্ত করার একটি ডিপিপি তৈরি করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত তা বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানেও সড়কটি প্রশস্ত করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅঘোষিত ধর্মঘট, অসহনীয় দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে পুলিশের কার-সিএনজি পিকআপের সংঘর্ষ, আহত ৭