কক্সবাজারে বহুল আলোচিত বাঁকখালী নদীর উচ্ছেদ ঘিরে শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার লোকজনের সাথে প্রশাসনের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় উচ্ছেদে ব্যবহৃত বুলডোজার ভাংচুর ও আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর লোকজনের উপর আক্রমণ হয়েছে। তবে প্রশাসন পিছু হটে আসায় কেউ হতাহত হয়নি। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজন আইপি সড়ক খ্যাত বিমানবন্দর সড়ক ও প্রধান সড়কে অবরোধ করে রাখে।
জানা গেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নুনিয়াছড়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে যাওয়ার পথে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটি ও প্রশাসনের লোকজন। এর আগে সকাল থেকে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে দেয় কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ নারী–পুরুষ। তারা সড়কে খুঁটিসহ বিভিন্ন ভারী বস্তু ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এছাড়া প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় শত শত টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান মোতায়েন করা হয়।
জানা যায়, সকালে অভিযানে যাওয়ার মুখে স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন বিআইডব্লিউটিএ ও সেনাবাহিনীসহ আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে দীর্ঘক্ষণ। এক পর্যায়ে জনগণের চাপের মুখে পিছু হটে তারা। বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে উচ্ছেদে ব্যবহৃত বুলডোজার ভাংচুর করা হয়। এক পর্যায়ে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের বিক্ষুব্ধ লোকজনে মাঝে ফেলে আসতে দেখা যায় আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যদের।
বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রশাসনকে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন। তারা বলেন, তারা শত বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন। খতিয়ানসহ সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। তারপরও সরকার জোর করে অবৈধভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের বসতি উচ্ছেদ করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। সবকিছু অমান্য করে গায়ের জোরে অভিযান চালাতে যাচ্ছে। আমরা জীবন থাকতে এই অভিযান চালাতে দেব না। তারা আরো বলেন, জনগণের জন্য রাষ্ট্র, সরকার। জনগণ ছাড়া দেশ হয় না। কিন্তু সরকার কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন না করে হাজার হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। রোহিঙ্গারা এই দেশে এসে থাকতে পারলে আমরা কেন আমাদের বাপ–দাদার ভিটায় থাকতে পারব না?
বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করে জনগণ ও প্রশাসন মুখোমুখি হয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি প্রশাসনের লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করেন। তবে তিনিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার একটি জঘন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা জনবিরোধী পদক্ষেপ। হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে কোনো ধরনের উন্নয়ন করতে চায় সরকার? এমন উন্নয়ন আমাদের দরকার নেই। জনগণের ক্ষতি হয় এমন উন্নয়ন হতে দেয়া হবে না। বিআইডাব্লিউটিএকে মানুষ মারার এই জঘন্য অভিযান বাতিল করার দাবি জানাই। মানুষের সাথে বসে কি সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। যদি আবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করব।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াছ খান বলেন, সড়ক অবরোধ করে রাখা লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। আলোচনার মাধ্যমে কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি লাঘবের জন্য বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাঁকখালী নদীর এই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে কক্সবাজারে গত পাঁচদিন ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে কস্তুঘাট ও পেশকা পাড়ায় সৃষ্ট গন্ডগোলের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে প্রশাসন। দুই মামলায় এজাহারনামীয়সহ সাড়ে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।