অনেক দাবি–দাওয়া, সংগ্রাম– আন্দোলনের ফলে কালুরঘাট সেতু নিয়ে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসাধারণের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কালুরঘাট পয়েন্টে ‘কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোশ দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়ন করবে। গত ২৮ জুন দৈনিক আজাদীসহ দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে সর্বশেষ খবরটি প্রকাশ পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সেতু নির্মাণে মোট প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এরমধ্যে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৮ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর ইশ্বরদী রেল প্রকল্প ও কালুরঘাটে নির্মিতব্য রেলওয়ের নতুন সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের সাথে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি (বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ২শ’ কোটি টাকা) স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা জিওবি ফান্ড থেকে ব্যয় হবে। প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ পরিশোধ করা হবে ৪০ বছরে। প্রতি বছর ২শ; কোটি টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি একনেকে উঠবে জানিয়ে প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, একনেকে অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে এবং ডিজাইন হবে। তারপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে। সেতুর মূল কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে দুটি ঋণচুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে চেয়ারম্যান ও সিইও ইয়ুন হি সুং চুক্তি দুটিতে স্বাক্ষর করেন।
এ খবরে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পুরো চট্টগ্রামে খুশির বন্যা চলছে। এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। কালুরঘাট সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার সাধারণ মানুষ শত কষ্ট আর দুর্ভোগের হাত থেকে মুক্তি পাবে নিঃসন্দেহে। শুধু তা নয়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন করা হবে। আজাদীর প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা বলেন, সেতুটি নির্মাণের পর, এই সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রেলওয়ে। ফলস্বরূপ, কালুরঘাট রেল–কাম–সড়ক সেতু প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী পার হওয়ার জন্য কালুরঘাট ছিল প্রথম সেতু। শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য ১৯৩১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটি নির্মাণ করলেও ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ এর ওপর দিয়ে ট্রেনও যেমন চলাচল করছে, তেমনি অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে পারছে। তবে যখন ট্রেন চলাচল করে তখন অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ১০ টনের বেশি ভারি যানবাহন চলাচলের ওপর। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এ সেতু।
বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন এলাকাবাসী। এজন্য যা কিছু প্রক্রিয়া দরকার, তা শেষ করার জন্যও তাগিদ রয়েছে তাঁদের পক্ষ থেকে। তাঁরা বলেন, কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুটি দেশের পর্যটন এবং অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।