বহুল আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলার রায় কাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৯:০৭ অপরাহ্ণ

হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মাথায় দেশের বহুল আলোচিত মেজর(অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আগামীকাল সোমবার (৩১ জানুয়ারি)।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল কাল সকাল ১০টায় রায় পাঠ শুরু করবেন এবং এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম।

তিনি বলেন, “সারা দেশবাসীর চোখ এ রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই চায় এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের একটি কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেন হয়। আর আমরা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে হত্যাকারীদের অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি।”

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আযহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়ার এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান।

ঘটনার শুরুতে পুলিশ এ ঘটনাকে ‘ক্রসফায়ার’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে মেজর সিনহা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দু’টি ও রামুতে একটি) মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠলে ঘটনার ৫ দিন পর ৫ আগস্ট সেনা প্রধান ও পুলিশ প্রধান কক্সবাজারে এসে সভা করেন এবং ওইদিনই নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ সহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পর ঘটনার মোড় ঘুরে যায়।

চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। প্রথমদিকে র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আহমদকে এসব মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সপ্তাহখানেক পর এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারীরা কর্মকর্তা। মামলায় অভিযুক্ত আসামীরা হলো বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কন্সটেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কন্সটেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কন্সটেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমালের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়ে গত ১ ডিসেম্বর শেষ হয় যেখানে ৬৫ জন স্বাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর স্বাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত, দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় ৪ জনের, তৃতীয় দফায় ৩ দিনে ৮ জনের, চতুর্থ দফায় ২ দিনে ৬ জনের, পঞ্চম দফায় ৩ দিনে ১৫ জনের, ষষ্ঠ দফার ৩ দিনে ২৪ জনের, সপ্তম দফার ৩ দিনে ৫ জনের এবং অষ্টম দফায় ৩ দিনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়ে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।

এরপর আদালত নবম দফায় ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ১৫ জন আসামির ৩৪২ ধারায় লিখিত ও মৌখিক সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করে। সর্বশেষ আদালত ৯ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি চারদিনের উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আজ ৩১ জানুয়ারি রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে কারাগারে আটক মামলার ১৫ আসামিকেও আজ আদালতে হাজির করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে অটোরিকশা চাপায় শিশু নিহত
পরবর্তী নিবন্ধমাইলেজ ইস্যু : ট্রেন চালকদের সোমবার থেকে কর্মবিরতি স্থগিত