বহিষ্কৃত ৬ জন হল ছাড়লেন তিন দিন পর

চমেক ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী নির্যাতন এখনো রয়ে গেছেন একজন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ৭ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে চমেক প্রশাসন। একই সাথে হোস্টেল ও কলেজ ক্যাম্পাসেও তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে গৃহীত শাস্তিমূলক এ সিদ্ধান্ত ওইদিন থেকেই কার্যকরের কথা বলা হয়। তবে অবাঞ্চিত ঘোষণার তিন দিন পর গতকাল বিকেলে বহিষ্কৃৃত ৬ জন হল ছেড়ে যান বলে খবর পাওয়া গেছে। অপর একজন গতকাল রাতেও হলে অবস্থান করছিলেন। তাকে হলের তৃতীয় তলার ১৮ (বি) কক্ষে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত পর্যন্ত হল ছেড়ে না যাওয়া ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. রিয়াজুল ইসলাম জয়। তিনি এমবিবিএস ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। নির্যাতনের ঘটনায় তাকে দুই বছরের জন্য মেডিকেল কলেজের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করে চমেক প্রশাসন।

বহিষ্কৃতদের হল ছেড়ে না যাওয়ার বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারের সাথে শনিবার কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ব্যস্ততার কারণে দিনে খোঁজ নিতে না পারলেও রাতে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়ার কথা জানান তিনি। গতকাল তিনি আজাদীকে বলেন, বিষয়টি জেনে শনিবার রাতেই হলে পুলিশ প্রহরা বাড়িয়েছি। তবে রোববার বহিষ্কৃতদের অনেকেই হল ছেড়ে চলে গেছে বলে শুনেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল দুপুরেও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হোস্টেলে দেখা গেছে। অবাঞ্চিত ঘোষণার পরও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হল না ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত গ্রহনের পরপর পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপরও কয়েকদিন তারা হল ছাড়েনি বলে জেনেছি। তারা যে কয়দিন ছিল, অবৈধভাবেই ছিল। হোস্টেলে তাদের নামে কোনো রুম বা সিট বরাদ্দ নেই। তাদের কেউ এখনো হল না ছেড়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বহিষ্কৃত ও অবাঞ্চিত যারা : ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান ছাত্রাবাসে সংঘটিত ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হিসেবে ৭ জনের নাম উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনে। অভিযুক্ত ৭ জনের মধ্যে অভিজিৎ দাশ ও মো. রিয়াজুল ইসলাম জয় এমবিবিএস ৫৯তম ব্যাচের। বাকি ৫ জন ৬২তম ব্যাচের। এরা হলেন সাজু দাশ, সৌরভ দেব নাথ, মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন সায়েল ও মো. ইব্রাহিম খলিল সাকিব।

অভিযুক্তদের মাঝে অভিজিৎ দাশকে তিন বছরের জন্য, মো. রিয়াজুল ইসলাম জয়, সাজু দাশ ও সৌরভ দেব নাথকে দুই বছরের জন্য এবং মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন সায়েল ও মো. ইব্রাহিম খলিল সাকিবকে দেড় বছরের জন্য মেডিকেল কলেজের সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়।

২০২১ সালের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে চমেক প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের তালিকায় এই সাতজনও ছিলেন। এর মাঝে অভিজিৎ দাশ দুই বছরের জন্য এবং মো. রিয়াজুল ইসলাম জয় দেড় বছরের জন্য বহিষ্কৃত হন। সাজু দাশ, সৌরভ দেব নাথ, মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন সায়েল ও মো. ইব্রাহিম খলিল সাকিব বহিষ্কার হয়েছিলেন এক বছর করে।

হোস্টেলে অবৈধভাবেই থাকছিলেন অভিযুক্তরা : ২০২১ সালের দুই গ্রুপের মারামারির পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রেখেছে চমেক প্রশাসন। পরে বহিষ্কৃতদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের শাস্তি স্থগিত করে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে হোস্টেলে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কিন্তু তারা ছাত্রাবাসেই থাকতেন। অভিযুক্তরা অবৈধভাবেই ছাত্রাবাসে থাকছিলেন বলে জানান চমেক অধ্যক্ষ।

জানা যায়, কক্ষ বা সিট বরাদ্দ না পেলেও অভিযুক্তদের মাঝে অভিজিৎ দাশ হলের তৃতীয় তলার ১৮ (বি) কক্ষ দখল করে ছিলেন। আর ১৭ () কক্ষটি দখল করেন রিয়াজুল ইসলাম জয়। এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জুনিয়রদের (৬২তম ব্যাচের) মাঝে সাজু দাশ ছিলেন নিচতলায়। আর বাকিরা চার তলার সি ব্লকের বিভিন্ন কক্ষে থাকতেন। নির্ধারিত না থাকায় ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মী অনেক সময় বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকতেন। হলে অবৈধভাবে থাকাকালীন তারা নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটান।

এ বিষয়ে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার আজাদীকে বলেন, এদের আগের শাস্তি কিন্তু মওকুফ করা হয়নি। স্থগিত রেখে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। হোস্টেলে তাদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অবৈধভাবেই তারা হোস্টেলে রুম দখল করে ছিল।

তারা বিশৃঙ্খলা করবে না বলে মুচলেকাও দিয়েছিল। কিন্তু তারা সে মুচলেকা ভঙ্গ করেছে। নতুন করে অপরাধে জড়িয়েছে। অবৈধভাবে হলে থাকাকালীনই নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। যার কারণে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের পাশাপাশি অভিযুক্ত এই ৭ শিক্ষার্থীকে হোস্টেল ও কলেজ ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রীকে খুন করে লাশ ঝুলানো হয় গাছে, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধখেলাপি মামলায় মোস্তফা গ্রুপের ৬ পরিচালকের বিরুদ্ধে আটকাদেশ