বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন ছাত্রলীগের একাংশের

২৩ জনের আবেদন পেয়েছে চমেক কর্তৃপক্ষ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নিজেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) বহিষ্কৃত ২৩ শিক্ষার্থী। আবেদন করা এসব শিক্ষার্থী চমেক ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ২৩ শিক্ষার্থীর আবেদন হাতে পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার। অবশ্য তারা কোন পক্ষের বা গ্রুপের তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি কলেজ অধ্যক্ষ। গত ২৩ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কলেজের মোট ৩১ জন ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে চমেক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকও রয়েছে। শাস্তির আওতায় আসা ৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন নিজেদের পক্ষের বলে দাবি করেছে উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারীরা। বাকি ৮ জন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
এদিকে, এক পক্ষের (নওফেল অনুসারী) শিক্ষার্থীরা শাস্তি প্রত্যাহারে আবেদন করলেও অপর পক্ষের (নাছির অনুসারী) শিক্ষার্থীদের আবেদনের বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারও বলছিলেন, ২৩ জনের আবেদন পেয়েছি। তবে বাকি ৮ জনের কোন আবেদন সোমবার (গতকাল) পর্যন্ত পাইনি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাস চালুর ২য় দিন (২৮ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে এ সংক্রান্ত ২৩টি আবেদন কলেজের ডেসপাচে জমা দেয়। গতকাল সকালে অফিস শুরুর পর এসব আবেদন হাতে পান কলেজ অধ্যক্ষ।
অবশ্য, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে উপমন্ত্রী অনুসারী শিক্ষার্থীরা আবেদন করলেও তাতে নিজেদের দোষ স্বীকার করেনি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারী ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. একেএম তানভীরের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। বহিষ্কারাদেশের পর সংবাদ সম্মেলন করে একাডেমিক কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছিলেন এই অংশের নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন ডা. একেএম তানভীর। অবশ্য, গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছিলেন নাছির অনুসারী চমেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মারামারির ঘটনায় ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে ওই দিন (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ২২ নভেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েই পরদিন (২৩ নভেম্বর) একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক আহবান করে চমেক কর্তৃপক্ষ। ২২ নভেম্বর হস্তান্তর করা ওই প্রতিবেদনসহ আগের আরো দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বহিষ্কৃত এসব শিক্ষার্থী সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী। একইসাথে ২৭ নভেম্বর থেকে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয় ওই একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত শনিবার (২৭ নভেম্বর) থেকে চমেকের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। ক্যাম্পাস খোলার একদিন আগেই (২৬ নভেম্বর) ছাত্রীদের হোস্টেল খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ছাত্র হোস্টেল বন্ধই থাকছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাল্লা দেওয়া বাসের চাপায় ঢাকায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধনতুন কমিটির আশায় নগর যুবলীগ