বহির্নোঙরে পণ্য খালাস হচ্ছে না ১৩ মাদার ভ্যাসেল থেকে

লাইটারেজ জাহাজের অভাব, বাকিগুলোতে রেশনিং করে বরাদ্দ সংকট কাটাতে ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী ৪২টি মাদার ভ্যাসেলের মধ্যে অন্তত ১৩টি জাহাজে লাইটারেজ জাহাজের অভাবে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বাকি জাহাজগুলোতেও লাইটারেজ জাহাজ দেয়া হয়েছে রেশনিং করে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের লাইটারেজ জাহাজের সংকট কাটাতে গতকাল ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাইটারেজ জাহাজ খালি করে দেয়া, যে সব আমদানিকারক আগে জাহাজ নিয়ে আটকে রেখেছে তাদের জাহাজে নতুন করে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সীমিতকরণ, বে ক্রসিংয়ের অনুমোদন শিথিলকরণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমদানি বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, প্রয়োজনীয় শর্ত উল্লেখ করে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের সাথে পণ্যের এজেন্টদের চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত সংকট সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে গতকাল ৪২টি মাদার ভ্যাসেল অবস্থান করছিল। প্রতিটি জাহাজের পণ্য খালাসের জন্য লাইটারেজ জাহাজের চাহিদা দেয়া হলেও অন্তত ১৩টি জাহাজকে কোন লাইটারেজ জাহাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) কাছে জাহাজ না থাকায় মাদার ভ্যাসেলগুলো অলস বসে রয়েছে। প্রতিটি জাহাজের দৈনিক অন্তত ফিঙড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি রয়েছে অন্তত ১৫ হাজার ডলার। জাহাজ অলস বসে থাকলেও এই টাকার যোগান বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানিকারককে পরিশোধ করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে গত বেশ কয়েকদিন ধরে লাইটারেজ জাহাজের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু জাহাজকে আমদানিকারকেরা ভাসমান গুদাম বানিয়ে রাখার পাশাপাশি বহু জাহাজই বাড়তি ভাড়া পাওয়ায় মোংলা এবং পায়রা বন্দরে চলাচল করছে। অনেকগুলো জাহাজ বিডব্লিউটিসিসির সিরিয়ালে না এসে নিজেরাই নিজেদের মতো করে লুকোচুরি করে চলাচল করছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে চাহিদানুযায়ী জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লাইটারেজ জাহাজের সংকট ঘুচাতে গতকাল ঢাকায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনটি জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, লোকাল এজেন্ট, পণ্যের এজেন্ট, বন্দরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জাহাজের সংখ্যা বাড়াতে পূর্বের ৪৫ থেকে ৫০ মিটার ল্যান্থের স্থলে ৩৫ মিটার ল্যান্থের জাহাজকেও বে ক্রসিং পারমিশন দেয়া হবে। এছাড়া ২০ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে লাইটারেজ জাহাজ খালি করে দেয়ার তাগাদাসহ যেসব আমদানিকারক অসংখ্য লাইটারেজ জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানিয়ে আটকে রেখেছেন তাদেরকে পরবর্তীতে জাহাজ কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বৈঠকে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বর্তমানে পণ্যের এজেন্টদের সাথে জাহাজ মালিকদের সংগঠনের কোন চুক্তি নেই। এতে করে ডাবল ট্রিপ, ডেমারেজসহ নানা ক্ষেত্রে সংকট বিরাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব না হলে পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে শংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নেটওয়ার্কে যুক্ত করার অন্যতম প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজ। ১৮শ’র মতো লাইটারেজ জাহাজ এই বিশাল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই কার্যক্রম সাবলীল এবং গতিশীল না হলে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ার আশংকা থাকে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম দৈনিক আজাদীকে জানান, সাড়ে তিনশ’র মতো পণ্যবোঝাই লাইটারেজ জাহাজকে ভাসমান গুদাম বানানো হয়েছে। এই প্রবলতা লাইটারেজ জাহাজ সংকট প্রকট করে তুলছে। এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ নৌপথের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসঞ্চয়ের আড়াই লাখ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণ পুড়ে ছাই, নিঃস্ব ওরা
পরবর্তী নিবন্ধ‘মবে’র মহড়া এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করব : উপদেষ্টা মাহফুজ