বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ

বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রমও ব্যাহত সাগর উত্তাল থাকায় অচলাবস্থা

হাসান আকবর | শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকারী সব মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। লাইটারেজ জাহাজ এবং মাছ ধরার ট্রলার চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় দেখা দিয়েছে এই অচলাবস্থা। একই সাথে বৃষ্টির কারণে বন্দরের অভ্যন্তরেও ব্যাহত হচ্ছে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিস্থিতি লাগাতার হলে কন্টেনার ভ্যাসেলের মতো খোলা পণ্যবাহী জাহাজেও জট তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাগরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তর বলছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বাতাসের তোড়ে সাগরে ১৪/১৫ ফুট উচ্চতার ঢেউ তৈরি হয়েছে। উত্তাল সাগরে কোনো জাহাজে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রবল ঢেউয়ের কারণে মাদার ভ্যাসেলের কাছে ভিড়তে পারছে না পণ্য খালাস করতে যাওয়া লাইটারেজ ভ্যাসেলগুলো। কাজে যাওয়া লাইটারেজ জাহাজগুলো সাগরে টিকতে না পেরে কর্ণফুলী নদীতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। এতে করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভোগ্যপণ্যসহ নানা পণ্য নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেলগুলো অলস ভাসছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ডাল, সরিষাসহ নানা ভোগ্য পণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর এবং কয়লাসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেল বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। এসব জাহাজ বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে। একেকটি মাদার ভ্যাসেল একসাথে বেশ কয়েকটি লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে। এক্ষেত্রে লাইটারেজ জাহাজগুলোকে মাদার ভ্যাসেলের গা ঘেঁষে অবস্থান নিতে হয়। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় তীব্র ঢেউয়ের কারণে জাহাজের গা ঘেঁষে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢেউয়ের তোড়ে একটি জাহাজের সাথে অপরটির ক্রমাগত আঘাতে দুটি জাহাজেরই ফেটে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে মাদার ভ্যাসেলগুলো কাজ বন্ধ রাখে। বহির্নোঙরে গত বৃহস্পতিবার থেকে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল ১৫ থেকে ২০টি মাদার ভ্যাসেলে পণ্য খালাসের প্রোগ্রাম ছিল; তবে একটি জাহাজেও কাজ হয়নি। লাইটারেজ জাহাজগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে। একাধিক শিপিং এজেন্ট এবং লাইটারেজ জাহাজের মালিক বলেন, সাগরের অবস্থা ভালো না হওয়ায় পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ আছে। বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল এবং কর্ণফুলী নদীতে শত শত লাইটারেজ ভ্যাসেল অলস বসে আছে বলে তারা জানান।

এদিকে বৃষ্টি এবং বাতাসের কারণে বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে বার্থিং নেওয়া খোলা পণ্যবাহী জাহাজগুলোর পণ্য খালাসও অনেকটা বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সিগন্যাল চলছে। সাগর উত্তাল। এমন উত্তাল সাগরে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সাগরে যাত্রা করেও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে দেড়শ ফিশিং ভ্যাসেল। সাগর উত্তাল হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ফিশিং ভ্যাসেল সাগরে যেতে পারছে না উল্লেখ করে একাধিক ফিশিং ভ্যাসেলের মালিক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সাগর এত বেশি উত্তাল যে, একটি জাহাজও পাঠাতে পারিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরে বেশ কিছুদিন ধরে কন্টেনার জাহাজে জট চলছে। বিশেষ করে গিয়ারলেস ভ্যাসেলের (যে জাহাজে নিজস্ব ক্রেন নেই) অবস্থা খারাপ। এখন বহির্নোঙরে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় খোলা পণ্যবাহী জাহাজেও জট দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার রেললাইনে পাহাড় ধস
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব ফেরত চায় চসিক