বহির্নোঙরসহ অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহন ব্যাহত

মাইকিং করে জাহাজ চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগ । এক পক্ষের আজ জরুরি মিটিং আহ্বান

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

লাইটারেজ জাহাজ মালিক এবং শ্রমিকদের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের মুখে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হতে শুরু করেছে। গতকাল বহির্নোঙর থেকে কয়েকটি জাহাজকে ফিরিয়ে আনা এবং অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে চলাচলকারী কয়েকটি জাহাজকে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

একপক্ষ নৌকা নিয়ে নদীতে মাইকিং করে জাহাজ চলাচল বিরত রাখার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে অপরপক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, চলমান কাজগুলো শেষ করার পাশাপাশি একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিনামা সম্পাদন এবং ভাড়ার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বিডব্লিউটিসিসির কার্যক্রম শুরু করতে হবে। চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকদের সংগঠন আইভোয়াকের পক্ষ থেকে গতকাল নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে সাক্ষাৎ করে বলা হয়েছে যে, আলাপ আলোচনা এবং ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ছাড়া সন্ত্রাসী কায়দায় নৌপরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। অপর দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নীতিমালা অনুসরণ করে বিডব্লিউটিসিসি বাস্তবায়ন ছাড়া জাহাজ মালিকদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এই ব্যাপারে আজ সকালে জরুরি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আগামী ১ কিংবা ২ নভেম্বর থেকে যাতে বিডব্লিউটিসিসির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজ মালিক এবং শ্রমিকদের বিবাদে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানিকৃত পণ্য খালাস ব্যাহত হতে শুরু করেছে। গতকাল মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস করতে যাওয়া লাইটারেজ জাহাজকে কুতুবদিয়ার কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে পণ্য পরিবহনে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দেশের লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের দুইটি একপক্ষ অবস্থান নিয়ে সদ্য প্রণীত নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল গঠন এবং সিরিয়াল প্রথার মাধ্যমে জাহাজ পরিচালনা করার উদ্যোগ নেয়। অপর সংগঠন ইনল্যান্ড ভ্যাসেলে ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং বা আইভোয়াকের দাবি দুর্নীতির কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া ডব্লিউটিসির আদলে কোন সংগঠন নয়। তিন সংগঠনের মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিডব্লিউটিসিসি গঠন করে সিরিয়াল প্রথায় জাহাজ চলাচল করতে হবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং ভাড়া নির্ধারণের আগে একই সিরিয়াল প্রথা চালুর কোন সুযোগ নেই বলেও তারা মন্তব্য করেন। তাদের পক্ষ থেকে বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল থেকে বর্তমানে যেসব পণ্য খালাস করা হচ্ছে চলমান সে কাজগুলো আগে দ্রুত শেষ করার উপরও জোর দেন। তারা বলেন, এসব জাহাজের খালাস কাজ শেষ হতে হতে ইতোপূর্বে তৈরি করে রাখা ত্রিপক্ষীয় চুক্তিনামা স্বাক্ষর এবং ভাড়ার হারটি নির্ধারিত হলেই বিডব্লিউটিসিসির কার্যক্রম শুরু করতে আর কোন বাধা থাকছে না।

কিন্তু আইভোয়াকের এই প্রস্তাবে কোন সাড়া মিলেনি বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আমাদের জাহাজগুলোকে ঘাটে ঘাটে বাধা দেয়া হচ্ছে। সাধারণ জাহাজ মালিকদের জাহাজকে পণ্য পরিবহন করতে দেয়া হচ্ছে না। এভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের নৌ পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রামের জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ গতকাল নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলমের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে পারভেজ আহমেদ বলেন, আমি ডিজি মহোদয়কে বলেছি যে, গেজেটের দোহাই দিয়ে বিসিভোয়া নেতৃবৃন্দ যেভাবে মাদার ভেসল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাসের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে এবং নৌ পথে জাহাজ চলাচলে বাধা দিচ্ছে এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়কে আমি বলেছি যে, আমরা চাই এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। কিন্তু এভাবে সন্ত্রাসি কায়দায় এই সেক্টরে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফেরত আনা যাবে না।

তিনি বলেন, নৌ পথে শৃঙ্খলা ফেরত আনতে হলে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠন তথা বিসিভোয়া, কোয়াব এবং আইভোয়াকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডাব্লিউটিসি বন্ধ হওয়ার পর আমরা বিসিভোয়া ও কোয়াবের নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। নানা বিষয়ে আলোচনা করেছি। একপর্যায়ে বিসিভোয়া নেতৃবৃন্দ ডক্টর কামাল হোসেন এসোসিয়েটসের বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার ওসমান এর মাধ্যমে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি তৈরি করেছিলেন। তিন পক্ষই ওই চুক্তির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন। ওই চুক্তিপত্রটি স্বাক্ষর করা হলেই সংকটের সুরাহা হয়ে যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি ভাড়ার হার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, যে হারে ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হচ্ছে তাতে কোন আমদানিকারকই সাড়া দেবেন না। ভাড়া অবশ্যই যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হতে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পরিবহন বিধিমালা ২০২৪ প্রয়োগ করে বিডব্লিউটিসিসি গঠন করতে হলে অবশ্যই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর এবং ভাড়ার হার কমাতে হবে বলে আমাদের পক্ষ থেকে ডিজি মহোদয়কে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিডব্লিউটিসিসির অন্যতম নেতা এবং বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভাড়া কমানোর কোন সুযোগই নেই। আমরা জাহাজ চালিয়ে এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না বহু জাহাজ মালিক। সুষ্ঠুভাবে জাহাজ চলাচল করার ব্যবস্থা করতে না পারলে এই সেক্টরের অস্থিত্বই থাকবে না। শত শত জাহাজ মালিক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা করছি না। নিজেদের স্বার্থে কিছু জাহাজ মালিক বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখতে চাচ্ছেন। আমাদের কাছে দেশের স্বার্থ সবার আগে, তারপর আমাদের জাহাজ মালিকদের স্বার্থ। আমরা আজ সকালে একটি জরুরি মিটিং আহ্বান করেছি। ওখান থেকে একটি ঘোষণা আমরা জানাবো। সবাই মিলে দেশের স্বার্থেই সেক্টরটিকে রক্ষা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সিরিজ বাঁচানোর মিশন টাইগারদের
পরবর্তী নিবন্ধবদির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন দুই ব্যাংক কর্মকর্তা