সাতকানিয়ায় কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজে ক্যাম্পাস দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় ছুরিকাঘাতে ৩ জন আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঘটনায় জড়িত এবং আহতরা কেউ কলেজের ছাত্র নয়, বহিরাগত।
কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কাশেম জানান, গতকাল সকাল থেকে কলেজে শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাস চলছিল। দুপুরের দিকে হঠাৎ ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দুইটি গ্রুপ কলেজ ক্যাম্পাসে এসে মহড়া দিতে শুরু করে। তারা উভয়পক্ষই নাকি ক্যাম্পাস দখল করতে চাই। কলেজ ক্যাম্পাসে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বহিরাগত লোকজন দেখে আমি কয়েকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলি। তখন বহিরাগত দুইটি গ্রুপকে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলি। এ সময় কলেজ মাঠে আমাদের কয়েকজন ছাত্রকে দেখে তাদেরকে শ্রেণিকক্ষে পাঠিয়ে দিই।
এদিকে, বহিরাগতদের মধ্যে কয়েকজন এসে কলেজে তাদের কর্মসূচি পালনের আগ্রহের কথা জানায়। তখন আমি তাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই অনুমতি ব্যতিত কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং কোন ধরনের কর্মসূচি পালন করা যাবে না। এ সময় তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়া জন্য বলি। তখন তারা ১০–১৫ মিনিট পর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার কথা জানায়। কিন্তু এর ২–৩ মিনিট পর বহিরাগত দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও এক পর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ছুরিকাঘাতে ও লাঠির আঘাতে ৩ জন আহত হয়েছে। আহতরা কেউ কলেজের ছাত্র নয়। উভয় গ্রুপের সংঘর্ষের বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে আবহিত করি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক ও বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসিফ খান সবুজ দলবল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আসার পর উভয় গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোঃ জামশেদ (৩০), আব্দুল মোমেন (২৮) ও মোঃ সালমান (২৯) ছুরিকাঘাতে আহত হয়। আহতদেরকে প্রথমে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক জানান, গতকাল কলেজ ছাত্রদলের একটি প্রোগ্রাম ছিল। আমরা কয়েকজন সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এজন্য কলেজে যায়। কিন্তু আমরা কলেজে যাওয়ার পরপর আসিফ খান সবুজ নামের এক প্রবাসী ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী ও মাদক সেবীকে সাথে নিয়ে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আমাদের নাম ধরে গালিগালাজ করতে শুরু করে। গালিগালাজের কারন জানতে চাইলে সবুজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের ছুরিকাঘাতে আমাদের ৩ জন ছাত্রনেতা আহত হয়েছে।
অপর গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসিফ খান সবুজ জানান, আমি দীর্ঘদিন পর বিদেশ থেকে দেশে এসেছি। এজন্য এলাকার কিছু ছাত্র কলেজে আমাকে সংবর্ধনা দেয়ার কথা জানায়। আমিও তাদের কথায় রাজি হয়ে কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে কলেজ থেকে তারা আমার বাড়িতে এসে হামলা ও ভাংচুর চালায়। সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান জানান, কলেজে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই ঘটনায় জড়িতরা চলে যায়। এ ঘটনায় এখনো কেউ কোন ধরনের অভিযোগ দায়ের করেনি।