নিরাপত্তা জোরদার এবং বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ ইলেকট্রনিক গেট স্থাপন করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ‘প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেট’ নামের বিশেষ এই গেটের জন্য প্রক্সিমিটি কার্ড ইস্যুরও উদ্যোগ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ এই সংস্থাটি। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব সংক্রান্ত শত শত নথি ছাড়াও কাস্টমসের সিস্টেম সফটওয়্যারে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ চালানের ডাটা রেকর্ড রয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থায় মাঝে মাঝে দেখা যায়, বহিরাগত লোকজন প্রবেশ করে অহেতুক গল্প গুজব করে। এতে চট্টগ্রামের কর্মপরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। তাই কাস্টমসের সকল স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের জন্য স্থায়ী কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রিভেন্টিভ ও প্রশাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ–কমিশনার মুহাম্মদ মাহফুজ আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে–রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর হিসেবে রাজস্ব ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও সেবাগ্রহীতাদের প্রবেশ অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নিশ্চিতকরণে কাস্টম হাউসে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট, কাস্টমস সরকারসহ সকল সেবাগ্রহীতাদের প্রক্সিমিটি কার্ড গ্রহণের জন্য িি.িমধঃবঢ়ধংং.পযপ.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে প্রক্সিমিটি কার্ড ছাড়া কাস্টম হাউসে প্রবেশ করা যাবে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসের প্রবেশপথে ইলেক্ট্রনিক গেট বসানোর জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলে আসছিলাম। এতে কাস্টমসে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হবে। কাস্টমসের কর্মচারী না হয়েও এক শ্রেণীর লোক বিভিন্ন শুল্কায়ন শাখায় রাজস্ব সংক্রান্ত নথি আনা নেয়ার কাজ করতো। এদেরকে কাস্টম হাউসে ফালতু নামে পরিচিত। এসব ফালতুদের বিরুদ্ধে কতিপয় কাস্টমস কমকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে স্পিডমানির নামে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এখন ‘প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেট’ স্থাপিত হলে এসব ফালতুদের দৌরাত্ম্যও ঠেকানো যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ–কমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অনাকাক্সিক্ষত বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রক্সিমিটি কার্ড সিস্টেম গেট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কার্ড কাস্টমসের কর্মকর্তা–কমচারী ও সেবাগ্রহীতা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা কাউকে প্রবেশে বাধা দেবো না। যাদের স্থায়ী কার্ড থাকবে না, তারা কার সাথে সাক্ষাত করবে, সেটি উল্লেখ করে ভিজিটর কার্ড নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার নুর নাহার লিলির কক্ষের তালা ভেঙে নথি চুরির চেষ্টার ঘটনায় মো. মেহেদী হাসান রায়হান এবং খায়েজ আহমদ নামের দুই ব্যক্তিকে আটকের পর বন্দর থানায় সোপর্দ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আটক দুই ব্যক্তিকে কাস্টম হাউসের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখেন। তখন তাদের খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার নুর নাহার লিলির কক্ষের দরজা খোলা দেখতে পান। এ সময় দরজা ভিতরে এক ব্যক্তিকে অন্ধকারে বিভিন্ন নথিপত্র খুঁজতে দেখা যায়। এছাড়া আরেক ব্যক্তি কাস্টমসে ভিতরে হাঁটাহাঁটি করছিল। এ সময় আনসার সদস্যরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা একটি মোটরসাইকেলযোগে পালানোর চেষ্টাকালে তাদের আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি চাবির রিং, একটি তালা, একটি ল্যাপটপ, ইউএসবি ক্যাবলের সাথে চিপস, ১টি রাউটার এবং মাস্টার চাবি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মহসিন বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন।