প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ। ১৯৮১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রতিবারই সম্মেলনে নেতাকর্মীরা আস্থা রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর।
এবারের সম্মেলনেও সব কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ সমর্থনে আবারো দলের সভাপতি হবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা একেবারেই নিশ্চিত। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ‘অবিকল্প’ মনে করেন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ফলে সম্মেলনে নজর থাকে শুধুই সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে এবং পরবর্তী প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং অন্যান্য সম্পাদকীয় পদের দিকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে শুরু থেকেই নানান কৌতুহল থাকলেও শেষ পর্যন্ত বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই এ পদে যে ‘হ্যাটট্রিক’ করতে যাচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত সংশ্লিষ্টরা। ফলে এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবার দৃষ্টি ‘প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদে। এরপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্যান্য সম্পাদকীয় পদে কারা আসছেন। নতুন কেউ যুক্ত হচ্ছেন কিনা আবার কেউ বাদ পড়ছেন কিনা সেটা নিয়েও দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ-পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং সময়ের এ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। কিছু পদোন্নতি, দায়িত্বে রদবদল ও খুব অল্পসংখ্যক নেতাকে বাদ এবং নতুন কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের রেওয়াজ অনুযায়ী, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথমে সভাপতির নাম প্রস্তাব করেন একজন নেতা। পরে আরেকজন নেতা তা সমর্থন করেন। সবার কণ্ঠভোটে সেটি পাস (অনুমোদন) হয়। একই প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন করা হয়। পরে বাকি পদগুলোতে নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের নব-নির্বাচিত সভাপতি। বেশিরভাগ
সময় ৮১ সদস্যের কমিটিতে কিছু পদ খালি রাখা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে ও কর্মীদের আবেগের কারণে আবারও সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা থাকছেন, সেটা একেবারে নিশ্চিত। নেতাদের ভাষ্য, মাঠের পরিস্থিতি ও সভাপতির সুনজরের ফলে ওবায়দুল কাদেরও যে দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকছেন, তাও প্রায় নিশ্চিত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ওবায়দুল কাদেরকে যদি সত্যিই এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে বর্তমান কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হতে পারে। তাদের পদে আনা হতে পারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন ড. হাছান মাহমুদ ও বাহাউদ্দিন নাছিম।
তারা আরও জানান, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন এবং মির্জা আজম হতে পারেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া সক্রিয় কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্যের পদোন্নতি হতে পারে। বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন। নতুন যুক্ত হবেন কিছু সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা-নেত্রী।
চট্টগ্রাম থেকে কারা থাকছেন নতুন কমিটিতে : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্বে রয়েছেন চট্টগ্রামের ৫ নেতা শীর্ষ নেতা। আজকের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলেও তাদের সবাই বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গতবারের ২১তম কাউন্সিলে চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যে আছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক পদে আছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আছেন আমিনুল ইসলাম আমিন।
এবারও এই পাঁচজনের স্বপদে বহাল থাকার সম্ভাবনা বেশি; তবে তাদের মধ্যে ড. হাছান মাহমুদকে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ারও পদোন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আমিনুল ইসলাম আমিনকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
চট্টগ্রাম থেকে কারা নতুনভাবে যুক্ত হতে পারেন : আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে ফের প্রত্যাবর্তন হতে পারেন ২০তম কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের। মূলত আগের পাঁচ নেতার দুজনকে স্বপদে বহালের পাশাপাশি দুই নেতার পদ বিন্যাস বা পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের জন্য চমক হিসেবে বিবেচিত হবে এবারের সম্মেলনে ব্যারিস্টার নওফেলের প্রত্যাবর্তন।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন নতুন নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্র্ভুক্ত হতে পারেন।