সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং উনার প্রভাব বিস্তার করে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রকাশিত আরো বিস্তারিত সংবাদে গণমাধ্যম জানিয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যদি আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হতেন। তার এই বক্তব্যকে ভিত্তি করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন অতিশীঘ্রই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফর করে যু্দ্ধ বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা যেনো তিনি করেন। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চলার পর অসংখ্য সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বোধদয় হয়েছে যে, এই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। যদিও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দুশছেন এবং রাশিয়াকে আগ্রাসী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মধ্যে অন্য একটি বাস্তবতা রয়েছে সেটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্র দেশ এবং তাদের সামরিক সংস্থা ন্যাটো ইউক্রেনকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার উস্কানি দিয়েছিলো বলে বিশ্লেষকগণ মনে করেন। ইউক্রেনকে যুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবর্তীর্ণ হওয়ার জন্য ন্যাটো ইউরোপীয় দেশসমুহ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর অস্ত্র, গোলাবারুদ, প্রযুক্তি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং যুদ্ধ বিমান সরবরাহ করেছে। অত্যাধুনিক ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র এবং যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সহায়তার ভিত্তিতে এমনকি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে যুদ্ধে দাড় করিয়ে রেখেছে।
রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত যুগে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এই সময়ের পরিস্থিতিকে রাজনীতির ভাষায় স্নায়ু যুদ্ধ বলা হত। পরবর্তীকালে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে চীন শক্তিশালী অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি হিসেবে অবতীর্ণ হওয়ার পরে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা জোরদার হয় এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশের দেশগুলিতেও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরমুখে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিপক্ষ হিসেবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার হোতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যপকভাবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে থাকেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা মিত্ররা কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেও পরবর্তীকালে বিভিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সংঘাত লেগে থাকে। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধে এসে, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি প্রক্সি ওয়ারের সূচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো রূপধারণ করেনি, কোনো শান্তি আলোচনা বা যুদ্ধ অবসানের কোনো চেষ্টা কাজ করেনি। সম্প্রতি জার্মানীর বিশ্লেষকদের তৈরী এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার গোপন ফাঁস হওয়া নথি বলছে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়া এই যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, একদিকে যেমন ইউক্রেনের বাহিরে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে তেমনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা ঘটতে পারে। এই গোপন নথির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার তরফ থেকে নানাবিধ প্রচারণা চালানো হবে এবং জার্মানী ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষথেকে বিশ হাজার সৈন্য সমাবেশ করা হতে পারে আর রাশিয়ার তরফ থেকে বেলারুশে সতের হাজার সৈন্য মোতায়েন হবে ফলে যুদ্ধ এক বিশাল আকার ধারন করতে পারে যা আর ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধে স্থির থাকবে না। এর ফলে বিশ্বযুদ্ধ যদি দেখা দেয় তাহলে কী পরিণতি হবে এবং পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কারণে সারাবিশ্বের কী অবস্থা হবে সেটা কল্পনা করাও একটা কঠিন ব্যাপার।
ইতিমধ্যে রুশ সিকিউরিটি কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেন যদি রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক স্থাপনায় আর হামলা চালায় তাহলে বাধ্য হয়ে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে। এর বাহিরে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইজরাইল কয়েক মাস ধরে নিরস্ত্র মানুষের উপরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ যাবৎ ত্রিশ হাজার নিরীহ নাগরিক নিহত হয়েছে এবং যার মধ্যে অর্ধেকের বেশী নারী ও শিশু। প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই হত্যাযজ্ঞের বিবরণ, ছবি, ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে। গাজায় এবং পশ্চিম তীরে এমনকি লেবাননে, ইয়ামেনে, দামেস্কে মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মানুষের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন সহ সবকিছু মানুষের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। পশ্চিম তীর এবং গাজাকে কবরস্থানে পরিণত করা হয়েছে। নব্বইভাগ আবাসন, বাড়ী–ঘর এবং ভবন ধংস হয়েছে। এই ধংশস্তুপের ভিতরে মানুষের মৃত দেহ পড়ে আছে এবং তা কবর দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে পানি, ওষুধ, জ্বালানি বলতে কোনো কিছু নাই। শুধুমাত্র মানবিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে গাজা এবং পশ্চিম তীরের জনগণ টিকে আছে। এই জনগোষ্ঠীকে একটি অর্ধমৃত জনগোষ্ঠী বলা যায়। পাকিস্তান এবং ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে, এভাবে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের বাহিরেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইয়ামেনের হুতি বিদ্রোহীরা সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রকেট ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লিপ্ত হয়েছে। লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজের উপরে হুতিরা আক্রমণ চালাচ্ছে। ইয়ামেনের হুতি আস্তানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। মায়ানমারের দখলদার জান্তা সরকারের সাথে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিশেষ করে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে এবং যুদ্ধে মায়ানমারের জান্তা সরকারের পরাজয় হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে এই যুদ্ধ ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়া মায়ানমারের কয়েকশ যোদ্ধা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং এই উত্তেজনা বিশেষ করে যুদ্ধভিত্তিক উত্তেজনা বাংলাদেশ এবং ভারতকেও নানাভাবে আঘাত করছে। মায়ানমারের বার লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের ভিতরে কয়েকবছর ধরে আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কর্মীগণ জাতিসংঘ কিংবা জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো কথাবার্তা বলছে। আমার কাছে আশ্চর্জনক মনে হয় যখন গাজায় মানুষের প্রাণ সংহার হচ্ছে, মানবিক মর্যাদা ভুলন্ঠিত হচ্ছে শিশু ও নারীদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে তখন মানবাধিকারের বিষয়টি সবার আগে না এসে অন্যান্য ক্ষেত্রে মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে। এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার ফিলিস্তিন ইজরাইল যুদ্ধকে কেন গণমাধ্যম বিশেষ করে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করছে সেটি আমার কাছে বোধগোম্য নয়। কারণ যুদ্ধ বলতে যা বুঝায় সেটি হলো দুই সামরিক শক্তির মধ্যে বা দুই দল সৈন্যের মধ্যে অথবা দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিক নারী ও শিশু তারা নিরস্ত্র সেখানে ইজরাইলের অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যবাহিনী বিনা বাধায় নির্বিচারে হত্যা করছে। এটি তো যুদ্ধ নয়, এটা হলো গণহত্যা। গণহত্যাকে যুদ্ধবলে অভিহিত করা কিছুতেই মানবিক কর্ম হতে পারে না। যদিও ইজরাইল বলছে তারা হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীকে নির্মুল করতে চায়।
১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি দখল করে ইজরাইল ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ধীরে ধীরে তা সম্প্রসারণ করার যে কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে হামাসের মত জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরী হওয়া কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু গণমাধ্যমে এই ধরনের রিপোর্টও দেখা গেছে যে হামাসকে ইজরাইল অর্থায়ন করছে এবং তারাই একে সৃষ্টি করেছে যাতে ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায়। এই ধারনা সত্যমিথ্যা কিনা তা আমরা জানিনা। কিন্তু আমরা এটা জানি, ওসামা বিন লাদেন এবং তার সংগঠন আলকায়দাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরী করেছিলো সোভিয়াত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সমাজতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু সে আলকায়দা বুমেরাং হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে চেপে বসেছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার যে বিশাল পরিকল্পনা হয়েছিলো সেটা আলকায়দা করেছে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলকায়দাকে নিশ্চিহ্ন করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশে তাদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো তারা সেইসব দেশে আবার সামরিক শক্তি নিয়ে চড়াও হয়েছে। যখন কোনো রাষ্ট্র অস্ত্র উৎপাদনের জন্য আধুনিক থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সামরিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার পেছনে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার একেকটি রাষ্ট্র বিনিয়োগ করে। কেনো উন্নত থেকে উন্নত অস্ত্র গোলাবারুদ সামরিক যানবাহন তৈরী করা হয়। এর এক মাত্র উদ্দেশ্য মানুষকে হত্যা করা। মানুষকে হত্যা করার জন্য অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্র উৎপাদন মূলত একটি অপরাধমূলক কাজ। কারণ অস্ত্র উৎপাদনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষকে হত্যা করা। সে যে দেশেরই মানুষ হোক বা যে ধর্মের বা যে বর্ণের মানুষ হোক। কিন্তু অস্ত্র উৎপাদন এটা একটি গর্হিত কাজ। এটা কেউ স্বীকার করবে না বরং তারা বলবে আমরা নিজেদের আত্বরক্ষার জন্য অস্ত্র উৎপাদন করি। পৃথিবীর ছোট বড় প্রায় দেশ হয় অস্ত্র উৎপাদন করে অথবা অস্ত্র কিনে মজুদ করে এবং বছরের পর বছর পর ধরে তাদের অত্যাধুনিক সংস্করনের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে। বিভিন্ন রাষ্ট্র যুদ্ধের পেছনে টাকা ব্যয় করে এটি যৌক্তিক কিনা এবং এর বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলার প্রয়োজন আছে কিনা তা কোনো মানবাধিকার কর্মী বা কোনো বুদ্ধিজীবী সেই বিষয়ে কিছু বলেছেন এরকম আমি শুনিনাই। পৃথিবীতে বহু বড় বড় বিজ্ঞানি বুদ্ধিজীবী জ্ঞানী ব্যক্তি আছেন কিন্তু যুদ্ধ এবং অস্ত্রের প্রতিযোগিতা হারাম এটা কেউ বলতে শুনিনি। বরং যিনি ডাইনামাইট আবিষ্কার করেছেন আলফ্রেড নোবেল তার নামে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। এটা হাস্যকর বলা যায়। পৃথিবীতে মানুষের চলাচল এখনো অবাধ নয়।
পৃথিবী বাউন্ডারি দ্বারা বিভক্ত। আমাদের দেশে যে সমস্ত ওপেন এক্সেস রিসোর্স আছে যেমন সমুদ্র, পাহাড় বন জঙ্গল একসময় সেখানে যেকোনো মানুষ যেতে পারত এবং তার রুটি রুজি অন্বেষণের জন্য সেখান থেকে সে কাঠ আহরণের বা মাছ ধরতে পারত। কিন্তু এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এখন আর পৃথিবীর কোথাও ওপেন এঙেস রিসোর্স বলতে কিছু নাই। আমাদের দেশে আমরা পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাচ্ছি সরকার অনেক অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। আমাদের দেশে উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এবং তারা দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য কিনতে সক্ষম হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। গরীব অনেক গরীব হয়ে যাচ্ছে, ধনী অনেক বেশি ধনী হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক স্থিতি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন কিনা নাকি দরীদ্র মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন সেটাও একটু ভেবে দেখার বিষয়। যদি গরীব মানুষ আশি থেকে একশ টাকা দামে চাউল কিনতে হিমশিম খায় সত্তর থেকে নব্বই টাকা কেজির আলু কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই বিপর্যয়কর অবস্থা এটাও মানবাধিবার বিরোধী কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। সুতারং বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সকল সংস্থা মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলেছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের খাবারের যে চাহিদা শারীরভিত্তিক চাহিদা পূরণে খাদ্যদ্রব্যের, বস্ত্রের, ঔষুধের মূল্য কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য গরীব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করার বিষয় কিংবা দ্রব্যমূল্য হ্রাস করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার দরকার কিনা সেটা ভেবে দেখার জন্য আমি অনুরোধ করবো।
লেখক : প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম; শিক্ষাবিদ, কলাম লেখক।