নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে নগরের প্রথম আন্ডারপাস নির্মাণে ‘প্রতিবন্ধক’ হয়ে দেখা দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসাসহ চার সংস্থার পাইপলাইন। তবে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠা পাইপলাইন বা ইউটিলিটি লাইন সরিয়ে আন্ডারপাস নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে চায় আন্ডারপাস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সংস্থাগুলোকে তাদের সার্ভিস লাইন সরিয়ে নিতে অফিসিয়ালি চিঠি দিয়েছে চসিক। এছাড়া দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে মৌখিক আলাপ–আলোচনা করছেন চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার ওয়াসা ও চসিকের প্রকৌশলীদের মধ্যে জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৭ মে ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এতে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকায় দরপত্রে অংশ নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেজবাহ এসোসিয়েটসকে আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। পরে কাজ শুরু করতে গিয়ে পাইপলাইনের বিষয়টি সামনে আসে।
যেখানে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে সেখানে রয়েছে ওয়াসার পাঁচটি পাইপলাইনের সংযোগস্থল। এছাড়া কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) পাইপলাইন এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ক্যাবল লাইন রয়েছে। দুই পাশে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) পোল ও বৈদ্যুতিক লাইন।
জানা গেছে, ইউটিলিটি লাইন অপসারণ ও প্রতিস্থাপনে গত ১ জুলাই সংশ্লিষ্ট চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে চসিক। বিটিসিএলের চট্টগ্রামের জেনারেল ম্যানেজার, ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী, কেজিডিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) এবং বিউবো কালুরঘাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, চসিক কর্তৃক বহদ্দারহাট মোড়স্থ আন্ডারপাস নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। মোড়টিতে সংস্থাগুলোর লাইন অপসারণ অথবা প্রতিস্থাপনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একজন ফোকাল পার্সন নিযুক্ত করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ওয়াসাসহ যেসব সংস্থার পাইপলাইন রয়েছে তাদের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করছি। প্রকৌশলীরা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। পাইপলাইনগুলো অপসারণ বা প্রতিস্থাপন করা হলে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, শহরের খুব গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর একটি বহদ্দারহাট। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের জমায়েত হয় সেখানে এবং প্রচুর গাড়িও আসা–যাওয়া করে। তাই লোকজন রাস্তা পারাপার করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্ভয়ে রাস্তা পার হতে পারে না। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ যাতে খুব সহজে রাস্তা পার হতে পারে তাই আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নিই। পথচারী পারাপারের জন্য এটিই প্রথম আন্ডারপাস হবে চট্টগ্রামে।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, যেসব সংস্থার পাইপলাইন রয়েছে তাদের প্রত্যেককে চিঠি দিয়েছি। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। মৌখিক আলোচনাও চলছে। আগামীকাল (আজ) ওয়াসার সঙ্গে মিটিং আছে। আশা করছি সেখানে সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম আজাদীকে বলেন, ওটা আমাদের পাইপলাইনের জংশন (সংযোগস্থল)। পৃথক পাঁচটি পাইপলাইন রয়েছে সেখানে। বর্তমানে রাস্তা থেকে ৫ থেকে ১০ ফুট নিচে রয়েছে এসব লাইন। সেগুলো সরানো খুব কঠিন। আন্ডারপাস এসব লাইনের নিচ দিয়ে করা যেতে পারে। কাল (আজ) এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেখানে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।
জানা গেছে, পথচারী পারাপারের সুবিধার্থে নির্মাণ হতে যাওয়া আন্ডারপাসে বহদ্দারহাট পুলিশ বঙের সামনে একটি এবং এর সোজা আরাকান সড়কের উত্তর পাশে আরেকটি প্রবেশপথ থাকবে। প্রায় ছয় মাস সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট লিমিটেড (ডিপিএম) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এর নকশা প্রণয়ন করে। আন্ডারপাসটি হবে ৪১ দশমিক ২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রশস্ত। এর উচ্চতা ৪ মিটার। দুই প্রবেশ মুখে একটি করে দুটি সিঁড়ি থাকবে। থাকবে একটি করে দুটি এসকেলেটরও (চলন্ত সিঁড়ি)। আন্ডারপাসের ভেতর হকার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই পাশে ১০টি করে ২০টি দোকান নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি দোকানের জন্য আন্ডারপাসের ২ দশমিক ৭৫ মিটার জায়গা লাগবে। এসব দোকান বাদ দিলে মাঝখানে সাড়ে ৪ মিটার বা প্রায় ১৫ ফুট জায়গা থাকবে মানুষের হাঁটার জন্য। এছাড়া জলাবদ্ধতায় পানি প্রবেশরোধে আন্ডারপাসের প্রবেশমুখ হবে ক্যানোপি আকৃতির। কোনো কারণে পানি প্রবেশ করলে তা নিষ্কাশনে থাকবে দুটি পাম্প। এছাড়া পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে এবং বেশ কয়েকটি অ্যাডজাস্ট ফ্যানও থাকবে ভেতরে।