বস্টনে শিক্ষার্থী হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি

আরিফ সাত বছর আগে ফটিকছড়ি থেকে আসেন

| সোমবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের কেমব্রিজ শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী সৈয়দ ফয়সাল আরিফের দাফন হয়েছে। এর আগে বস্টনের রক্সবিউরি মসজিদে হয়েছে তার জানাজা। শুক্রবার বাদ জোহর জানাজার পর রক্সবিউরিটির একটি কবরস্থানে ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থীকে দাফন করা হয়। জানাজার আগে আরিফের মাবাবা, দাদী এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মাবাবার একমাত্র ছেলে আরিফ বছর সাতেক আগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ পড়ালেখা করছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বস্টন ক্যাম্পাসে। আরিফের মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে কেমব্রিজ শহরের চেস্টনাট স্ট্রিটে বুধবার দুপুরে। হটলাইনে পুলিশ খবর পায়, এক তরুণ ছোরা হাতে একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে বেরিয়েছে। এরপর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয় এবং তাদের গুলিতে প্রাণ যায় আরিফের। খবর বিডিনিউজের।

এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে কেমব্রিজ শহরের বাসিন্দারা। পুলিশের গুলিতে আরিফের মৃত্যুর ঘটনাকে প্রবাসীরা দাবি করেন ‘পুলিশি হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে। আরিফের জানাজায় অংশ নেওয়া কয়েকজনের বলেন, দুপুরে কলেজে যাওয়ার জন্য আরিফ তার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। ফলে তিনি জানালা দিয়ে বেরিয়েছেন, খালি গায়ে রাস্তায় ছিলেন, এসব তথ্য তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য, সেখানে আসলে কী ঘটেছিল, নিরপেক্ষ তদন্ত হলে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

আরিফ ‘হত্যার’ বিচারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার কেমব্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাতে অংশ নেয় আরিফের সহপাঠীরাও।

মিডলসেঙ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ম্যারিয়েন রায়ান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশের হটলাইনে ফোনটা করেছিলেন কেমব্রিজ পোর্টের এক বাসিন্দা। তিনি বলেছিলেন, এক তরুণ খালি গায়ে ঘরের জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তার হাতে বড় আকারের একটি ছুরি রয়েছে। তরুণটি নিজেকে ছুরিকাঘাতে আহত করার চেষ্টা করছে।

এ খবর জেনে ডজনখানেক পুলিশ সেখানে যায়। তারা ওই তরুণকে থামতে বললে তাতে সাড়া না দিয়ে তিনি চেস্টনাট স্ট্রিট দিয়ে দৌড়াতে থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ছুরিটি ফেলে দিতে বলা হয়। তরুণটি তখন ছুরি উঁচিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায় বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির ভাষ্য। তিনি বলেন, এ অবস্থায় পুলিশ তার দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুরুতর অবস্থায় বস্টন জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কেমব্রিজের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না। সরেজমিনে তদন্ত চলছে। যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় একটি টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই এলাকার বাসিন্দা এক নারী বলেছেন, আরিফের হাতে কোনো ছুরি তিনি দেখেননি।

বর্তমানে বিদেশ সফরে থাকা কেমব্রিজ শহরের মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তিনি সোমবার বস্টনে ফিরে আরিফের পরিবার এবং কম্যুনিটি লিডারদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধর্ষণে জন্ম নেয়া শিশু ও ধর্ষণকারী পিতা-পুত্র হিসেবে পরিচিত হবেন
পরবর্তী নিবন্ধ১২শ কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর অভিযোগ