বসন্ত কুমার বিশ্বাস(১৮৯৫–১৯১৫)। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের শহিদ বিপ্লবী। তাঁর জন্ম ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ই ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলার অন্তর্গত পরগাছাতে। তার পিতার নাম মতিলাল বিশ্বাস। ছাত্রাবস্থায় তার শিক্ষক ছিলেন ক্ষীরোদচন্দ্র গাঙ্গুলি, মূলত তার প্রভাবেই বসন্ত বিপ্লবী রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। যুগান্তর গোষ্ঠীর কর্মী অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এর সাথে বসন্তর পরিচয় হয় এবং সেই সূত্র ধরে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে রাসবিহারী বসুর সাথে ‘বিশে দাস’ ছদ্মনাম নিয়ে তিনি উত্তর ভারত চলে যান, রাসবিহারীর বৃহৎ বিপ্লব পরিকল্পনা সফল করার ব্রত নিয়ে। তিনি যুগান্তর গ্রুপের নেতা অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও রাসবিহারী বসুর নিকট সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের দীক্ষা নেন। রাসবিহারী বসুর তত্ত্বাবধানে তিনি বোমা ছোঁড়া অভ্যেস করতে থাকেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল বড়োলাট হার্ডিঞ্জ। এই বোমাটি বিপ্লবী রাসবিহারীর অনুরোধে তৈরি করে দিয়েছিলেন প্রবীণ বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক। স্ত্রীলোকের পোশাকে লীলাবতী নাম নিয়ে বসন্ত ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে দিল্লির উন্মুক্ত রাস্তায় লর্ড হার্ডিঞ্জ–এর ওপর বোমা নিক্ষেপ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি যখন তাঁর পিতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পালন করছিলেন, তখন তাঁকে নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে দিল্লিতে দিল্লি–লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি শুরু হয় এবং ৫ অক্টোবর বসন্তকুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সরকার তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই বেশি আগ্রহী ছিল। তাই লাহোর হাইকোর্টে একটি আপীল দাখিল করা হয় এবং বিচারের নামে একটি প্রহসন অনুষ্ঠিত হয়। আম্বালা জেলে বসন্ত বিশ্বাসের ফাইলে কারচুপি করা হয়। ফাইলে তার বয়স দুবছর বাড়িয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, তিনি তার কৃত অপরাধের তীব্রতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন। এখন পর্যন্ত জেলের ফাইলে এ ভুলের সংশোধন করা হয়নি। বসন্তকুমার বিশ্বাসকে ফাঁসি দ্বারা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মে বসন্তকুমার বিশ্বাস অত্যন্ত শান্ত ও অবিচলিত মনে ফাঁসির মঞ্চে উঠেন। পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে মাত্র বিশ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বসন্তকুমার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ আত্মত্যাগী হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন।