লাল টিপ আর বাসন্তী রঙের শাড়িতে সেজে আসা মেয়েটির খোঁপায় উঠেছে হলুদ গাঁদার মালা। আবির এসে ছুঁয়ে যায় তার মৃদু হাসিতে টোল পড়া গাল। সেই পরিবেশে দূর থেকে কোকিলের সুরের মতো ভেসে আসে ‘বসন্ত এসে গেছে’।
সত্যিই তাই, সব স্বপ্ন আর অপেক্ষা পূর্ণ করে অবশেষে প্রকৃতি আর নগর জীবনে এলো-বসন্ত। দিন ক্ষণ মেপে, অনেকটা রঙিন-উচ্ছ্বলতা নিয়ে বসন্ত এলো নগরে। তারপর বাদ্যযন্ত্র এ রাজ্যের সুরে সে ধরা দিয়েছে নাগরিক জীবনের চঞ্চলতায়। এমনই রঙিন পরিবেশে গতকাল সোমবার বাঁশির সুরে আর তবলার লহড়িতে, গানে গানে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনে ভালোবাসার আবাহনে মেতেছিল চট্টগ্রাম নগরী।
সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় বসন্ত উৎসবের নানা আয়োজন। নগরীর জামালখান মোড়, থিয়েটার ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণ, পাহাড়তলির শেখ রাসেল পার্ক এবং প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বসন্ত উৎসব।
‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এলো প্রাণে’ স্লোগান নিয়ে থিয়েটার ইন্সটিটিউটের মুক্তমঞ্চে শুরু হয় বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের একাংশের বসন্ত উৎসব। বসন্ত উৎসবের আয়োজনে প্রথমেই শিল্পীরা সমবেত এসরাজ বাদ্যযন্ত্রে পরিবেশন করেন বাসন্তী রাগ। এরপর বসন্তের আবাহন পাঠ করেন বাচিকশিল্পীরা। বসন্ত কথন শেষে শুরু হয় আবির মাখার পর্ব। তারপর একে একে মঞ্চে উঠে আসে বসন্তের গান, নৃত্য। তা থেকে বাদ পড়ে না আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠী সংস্কৃতিও।
আনন্দী সংগীত নিকেতনের ২৫ সদস্যের তবলার লহড়িতে শুরু হয় উৎসবের আয়োজন। তারপর একে একে সংগীত ভবনের শিল্পীদের গান এবং একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী পারভেজ চৌধুরী।
শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি নানা বয়সী মানুষ মুক্তমঞ্চে সমবেত হন। বসন্তের গানে গলা মেলান তারা। খোঁপায় ফুল আর বাসন্তী পোশাকে সেজেছিলেন সবাই। শিশুদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল উৎসব প্রাঙ্গণে রাখা বায়োস্কোপ।
চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন। অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া, বোধনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য প্রশান্ত চক্রবর্তী, বোধন সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষ, সহ-সভাপতি নারায়ণ প্রসাদ বিশ্বাস, শিমুল নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী বক্তব্য দেন।
এদিকে নগরীর পাহাড়তলি আমবাগান শেখ রাসেল পার্কে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের অন্য অংশের আয়োজন শুরু হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের বাঁশির সুরে। এরপর দলগত আবৃত্তি, গান এবং দীপক দাশ ও তার দলের ঢোল বাদনে মেতে ওঠেন বসন্ত আবাহনে সমবেতরা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে, চট্টগ্রামে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা জি এস যোশী, পেশাজীবী নেতা ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বোধন সোহেল আনোয়ার।
‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘ওরে গৃহবাসী দ্বার খোল, দ্বার খোল’, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ গানের সাথে নাচে আর আবিরের রঙে বসন্ত উৎসব জমে ওঠে শেখ রাসেল পার্ক। ফাগুনের মোহনায় ততক্ষণে দর্শক সারি পরিপূর্ণ হয়েছে বসন্ত ভালোবাসা মানুষের লাল আর বাসন্তী রঙের সাজে। শিল্পীদের সঙ্গে গুণগুণিয়ে সুর ওঠে..বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!