বসন্তে শিশুর জলবসন্ত রোগ

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী | শনিবার , ২২ মার্চ, ২০২৫ at ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স এর অস্তিত্ব পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। অসুখটি ভাইরাসজনিত তীব্র ছোঁয়াচে। ভাইরাসের নাম ভ্যারিসেলা জসটার, এক ধরনের নিরীহ ডিএনএন ভাইরাস ক্ষণভঙ্গুর। বাইরের তাপমাত্রার গরমে বেশিদিন বাঁচে না। সাবান, এন্টিসেপটিক লিকুইড এসবের দ্বারাও সহসা ধ্বংসপ্রাপ্ত।

সংক্রমণের ধরন

শতকরা ৯০ ভাগ জলবসন্ত অনূর্ধ্ব ১০ বছর বয়সে দেখা যায়। বেশি মেলে পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সের শিশুতে। তবে তা যে কোনো বয়সে হতে পারে, এমনকি নবজাতকেও। পরিবারে একজনের জলবসন্ত হয়ে থাকলে, অন্যদের যারা আগে এ রোগে ভোগেনি, তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। অসুখটি মূলত জানুয়ারি থেকে মে, অর্থাৎ শীতবসন্ত ঋতু জুড়ে হয়। রোগ ছড়ায় সরাসরি সংসর্গে, হাঁচি, কাশি, থুতু লালার সাহায্যে হাওয়ায় মিশে ড্রপলেট সংক্রমণে। জলভরা কাঁচা ফোসকায় জীবাণু থাকে। তাই তা ফেটে গেলে বা খুঁটালে রোগ ছড়াতে পারে।

জলবসন্ত রোগের উপসর্গ

শরীরে ভাইরাস প্রবেশের সময় থেকে রোগলক্ষণ ফুটে ওঠার ইনকিউবেশন পিরিউড ১১ থেকে ১২ দিনের মতো। সাধারণভাবে র‌্যাশ বেরোনোর ২৪ ঘণ্টা পূর্ব থেকে উপসর্গ দেখা যায় যেমনম্যাজম্যাজে ভাব, ম্যাকিউল হয়ে প্যাপিউলে পর্যবসিত হওয়া, তারপর পুঁজভরা দানার মতো প্যাসচিউলে রূপান্তর। র‌্যাশ একদিনেই সব বেরিয়ে যায় না, ‘সাকসেসিভ ক্রপস’ দেখা যায়। প্রথমে শুরু হয় বুুকে পিঠে, পরে হাতেমুখে ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। খুব চুলকায়। ছয়সাত দিন পর থেকে র‌্যাশ শুকাতে শুরু করে। ১৩১৪ দিন থেকে খোসা পড়তে শুরু করে অতঃপর রোগ নিরাময়।

অসুখের নানা জটিলতা

চিকেন পক্সের জটিলতা বেশি দেখা যায় না। শিশু রোগপ্রতিরোধক শক্তিতে দুর্বল থাকলে, যেমনলিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু, স্টেরয়েড নির্ভর শিশু, সহজে মারাত্মক নিউমোনিয়া, রক্তপাতসর্বস্ব জটিলতার শিকার হতে পারে। কখনো কখনো এনকেফালাইটিস, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, প্রভৃতি বিষম জটিলতা তৈরি হয়।

চিকিৎসাব্যবস্থ্‌া

শিশুর স্বাভাবিক খাবার বজায় রাখা। জল ও পানীয় বেশি বেশি খাওয়ানো। চুলকানি লাঘবে ওষুধ প্রয়োগ। নখ ছোট রাখা। পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন পোশাকআশাক পরিধান করানো।

চিকেন পক্স ও অ্যাসপিরিন ওষুধ সেবনের সংসর্ণে ‘রিই সিনড্রম’ নামক জীবন সংহারক অসুখের সম্পর্ক আছে। তাই চিকেন পক্স আক্রান্ত শিশুর জ্বর কমানোর কাজে অ্যাসপিরিন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে প্যারাসিটামল দেওয়া যাবে।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় এসাইক্লোভির নামক নির্দিষ্ট ওষুধের আগেভাগে প্রয়োগে সুফল মেলে। পক্সের সংসর্গে আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ‘ভেরিসেলা জসটার ইম্যুনোগ্লাবুলিন’ প্রয়োগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শক্রমে দেওয়া যায়।

রোগ প্রতিরোধক উপায়

চিকেনপক্সের কার্যকর টিকা আছে। ১ম ডোজ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে। ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ। টিকা দিতে হবে সাবকিউটোনিয়াসলি, মাংস বা শিরাতে না। রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা সাধারণভাবে টিকা দেওয়ার দুসপ্তাহ পরে অর্জিত হয়। চিকেনপক্স টিকা যথেষ্ট নিরাপদ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নগণ্য।

একবার এই রোগ হয়ে থাকলে শরীরে ইমিউনিটি জন্মায়। তাতে করে দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

লেখক

প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো সামাজিক বিচার ব্যবস্থা সালিশ
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে