বলী খেলাকে ছুটি দিয়ে দিলেন মফিজ-খাজা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

জব্বারের বলী খেলা যারা দেখতে যান তারা সবাই একটা দৃশ্য অবলোকন করেন। তবে সে দৃশ্য বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরেই দেখে আসছে দর্শকরা। তা হচ্ছে দুজন বুড়ো লড়াই করছে। শ্বেত শুভ্র শ্মশ্রু মন্ডিত এই প্রবীণের লড়াই দেখে এখনো বেশ আনন্দ পান দর্শকরা। যদিও এখন আর তাদের লড়াইয়ে সেই তেজ নেই। নেই হারা কিংবা জেতার তাড়না। এই দুজন যেন জব্বারের বলি খেলার ব্রান্ড হয়ে গেলেন। এই দুজন হলেন পতেঙ্গার মোহাম্মদ খাজা আহমদ এবং অন্যজন হলেন হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামের মফিজুর রহমান। এক জনের বয়স ৭২ আর অন্যজনের বয়স ৭০। বিগত ৪৯ বছরের মতন গতকালও লালদিঘির মাঠে বলি খেলার মঞ্চে উঠেছিলেন দুজন। বলিও ধরেছিলেন। কিন্তু বিচারকরা দুজনকেই বিজয়ী ঘোষণা করলেন। আর এই বলি ধরার মধ্য দিয়ে জব্বারের বলি খেলার পঞ্চাশতম বারের ধারাবিিহকতায় রেখা টেনে দিলেন এই দুই প্রবীণ বলি।

গতকাল খেলা শেষে খাজা আহমদ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর খেলবেন না বলি খেলা। তবে যদি সুস্থ থাকেন তাহলে দেখতে আসবেন বলি খেলা। বলি খেলা খেলতে খেলতে দুজনের মধ্যে যেন দারুণ এক বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তাইতো প্রতি বছরই ১২ বৈশাখ আসলে একজন আরেকজনকে খুজে নেন। বলি খেলার মঞ্চে উঠে লড়াই করেন। কখনো দুজন জিতেন আবার কখনো স্বেচ্ছায় দুজন হারেন। এ দুজন যেন জব্বারের বলি খেলার সবচাইতে বড় বিজ্ঞাপন। দর্শকরাও এই দুজনের খেলা দেখতে উম্মুখ হয়ে থাকেন। যদিও তাদের খেলা থেকে তেমন কিছু পাওয়া যাবেনা। তারপরও এই দুই বুড়োকে দেখলেই যেন অন্যরকম তৃপ্তি। গত ৫০ বছরে অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকলেন মফিজ এবং খাজা। গতকাল খাজা আহমদ যেমন মনে করতে পারলেন না কতবার তিনি এই বলি খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তবে বলি খেলায় সেরা হয়ে এক ভরি ওজনের স্বর্ণ পদক জেতার স্মৃতিটা এখনো তাজা রয়েছে তার। তবে সে সময় এতটা জৌলুস ছিল না বলে জানান খাজা আহমদ। কিন্তু তখন খেলায় প্রাণ ছিল। প্রচুর আতশ বাজি পোড়ানো হতো বলেও জানালেন এই সত্তরোর্ধ মফিজ এবং খাজা।

এই দুই বয়বৃদ্ধ খেলার পাশাপাশি নেচে গেয়ে দারুণ আনন্দ দেন দর্শকদের। খেলা শুরুর আগে তাদের নাচটাও যেন একটা ট্রেডমার্ক। জব্বারের বলি খেলার দিন আসলে এদুজন যেন ফিরে যান সেই যৌবনে। যখন বলি খেলার মাঠে ঝড় তুলতেন দুজন। তবে মনের দিকে এখনো শক্ত সামর্থ থাকলেও বয়সের কাছে হার মানতে হচ্ছে দুজনকে। তাইতো জব্বারের বলি খেলাকে যেন ছুটি দিয়ে দিলেন মফিজ এবং খাজা। তবে বিদায় বেলায় এই দুই বয়বৃদ্ধের প্রত্যাশা এই বলি খেলা যেন চলমান থাকে। যদিও করোনার কারণে থামতে হয়েছে জব্বারের বলি খেলাকে। মফিজ এবং খাজা চান যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন যেন এই বলি খেলা দেখে যেতে পারেন। খাজা আহমেদের ছেলেও এখন জব্বারের বলি খেলায় বলি ধরতে আসে। গতকালও তার ছেলে বলি খেলায় অংশ নিয়েছে। তিনি চান তার ছেলেরাও যেন এই বলি খেলায় নিয়মিত অংশ নেন। জব্বারের বলি খেলার আরো একটি আসর শেষ হয়ে গেল। আগামী বছর বসবে আরো একটি আসর। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসবে অনেকেই। দেখা যাবে না পঞ্চাশ বছর ধরে দেখে আসা সেই মফিজুর রহমান এবং খাজা আহমদকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি আজ বাংলাদেশের মেয়েরা
পরবর্তী নিবন্ধজব্বারের বলী খেলাকে বিদায় বললেন রেফারি মালেক