বান্দরবানে বলসুন্দরী বরই চাষে ভাগ্য ফিরেছে তিন পাহাড়ি যুবকের। তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের এই যুবকরা সম্পর্কে তিন ভাই। তাদের ছোটজন দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা চলতি বছর ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রেইচা সাতকমল পাড়ায় পৈতৃক পাঁচ একর পাহাড়ি জমিতে বরই চাষ শুরু করেন। জমিতে ৯০০টি বলসুন্দরী বরইয়ের কলম চারা রোপণ করেন। যা খুলনার পাইকগাছা থেকে অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করা হয়েছিল। অন্য কাজের ফাঁকে বড়ভাই রাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা, মেঝ ভাই সাজুময় তঞ্চঙ্গ্যা এবং ছোটভাই দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা তিন ভাই মিলে আলোচনা করে বাগানটি গড়ে তোলেন। সফল চাষি দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগান যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ৬ লাখ টাকার বরই বিক্রিয় করা হয়েছিল। এ বছর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় ৪ গুণ বেশি ফলন হয়েছে। যার ফলে এবারে এই বাগান থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। তিনি আরও বলেন, বাগানে বলসুন্দরী ছাড়াও কাশ্মীরি বরই চারা লাগানো হয়েছে। বাগানে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি চারা ৫০ টাকা হিসেবে ৪৫ হাজার ৫শ টাকা খরচ হয়েছিল। লাগানো, সার ও পরিচর্যাসহ সবমিলে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মত খরচ হয়। বর্তমানে তাদের বাগানে দুই হাজারেরও বেশি বলসুন্দরী জাতের বরই গাছ রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১৯শ গাছে ফলন এসেছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা বাগানের বরই কেনার জন্য বাগান পরিদর্শন করেছে। গতবছর ২০০ টাকা কেজি দরে পাকা বরই এবং ৩০০ টাকা কেজি দরে শুকনো বরই বিক্রি করেছিলাম। সেই হিসাবে এবার বাগান থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রির প্রত্যাশা করছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন বলেন, এ বাগানের বরই সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। এর আগেও তিনি দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যার বাগান থেকে বরই পাইকারি দরে কিনে নিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেছেন। বরই বিক্রি করে লাভবানও হয়েছেন। এবছরও বাগানটি কিনতে দেখতে এসেছি ক’জন মিলে। স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী আলী আহমদ বলেন, তিন ভাইয়ের বরই বাগানে সবগুলো বরই কিনতে বাগান ঘুরে দেখেছি। বাগানের মালিকদের সঙ্গে দর–দামে মিলে গেলে পুরো বরই বাগানটি কিনে নেব।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহনেয়াজ জানান, জুম চাষের পরিবর্তে পাহাড়ের শিক্ষিত যুবকরা মিশ্র ফল বাগান সৃজনে ঝুঁকেছে। বর্তমানে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত বরই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। জেলায় বলসুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, নারিকেল কুল প্রজাতির বরইয়ের বেশ ভালো চাষ হচ্ছে। এবার জেলায় ১৫শ হেক্টর জায়গায় কুল বরই চাষ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরাও স্বাবলম্বী হচ্ছে।