বিয়ের আসরে বসে মুখে রুমাল চেপে কনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন বর। জবাবে কনে মিটিমিটি হেসে লজ্জায় লাল হয়ে বেনারসীর আচলে মুখ লুকালেন। বর–কনে চোখের ভাষায় জানান দিল দু’জন দু’জনার। চোখের ভাষাই তাদের সম্বল, মুখ ফোটে মনের কথা তাদের বলা হবে না কখনও। কারণ বর–কনে দু’জনই যে বাক প্রতিবন্ধী। বর জাহেদ উল্লাহ পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মেহেরনামা এলাকার সৈয়দ উল্লাহর ছেলে। কনে সুমাইয়া আক্তার উজানটিয়া ইউনিয়নের সামিউদ্দিন পাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক ও জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী।
গত মঙ্গলবার জমকালো আয়োজনে এই দুইজনের বিয়ে সম্পন্ন হলো পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামিউদ্দিন পাড়া এলাকায়। এ বিয়ের পুরো আয়োজনের পেছনের ব্যক্তিটি হলেন পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহসান উল্লাহ। তিনি জানান, কনের বড় ভাই আমার দলের কর্মী। অপর দিকে বর আমার প্রতিবেশী। দুটি পরিবারই নিতান্ত গরীব। বেশ কিছু দিন ধরে বাক প্রতিবন্ধী জাহেদ উল্লাহর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছিল পরিবার। কিন্তু বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ মেয়ে দিতে রাজি হয়নি। একদিন আমার দলের আরেক কর্মীর মাধ্যমে সুমাইয়া আক্তারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সুমাইয়া আক্তারও জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী বলে জানান তার পরিবার। বর কনের দেখাদেখি হয়, দু’পক্ষের সম্মতিতে ১ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। কনে বায়না ধরলেন– বিয়ের দিন বরযাত্রী এসে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে যেন তাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কনের অসচ্ছ্বল পরিবারের পক্ষে এত ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব। কনের পিতাকে আশ্বস্ত করলাম, আমার অর্থায়নে বিয়ের উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করব। সেই মত সবকিছু হল। পরবর্তীতে নবদম্পতির জন্য একটি ভিটেবাড়ির ব্যবস্থা করে দিতেও সক্ষম হই।
বরের পিতা সৈয়দ উল্লাহ সবকিছুর জন্য আহসান উল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য বহু জায়গায় মেয়ে খুঁজেছি, কেউ বোবা ছেলেকে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয় না। আজ আমার মনের আশা পূরণ হল, আমার ছেলের বিয়ে হল। এর পেছনে রয়েছেন আহসান উল্লাহ। তিনি না হলে এতকিছু সম্ভব হত না।
বর–কনের পরিবার তাদের সন্তানের দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
