বর-কণের উপস্থিতি ছাড়া বিয়ে পড়ান চরপাথরঘাটার ‘কাজী’!

ডিসির কাছে ইউএনওর চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন

জে. জাহেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার , ২৪ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজীর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও কাজীর কাছে নেই সরকারি কাবিন নামার বালাম বই।

এমনকি অতিরিক্ত কাজী দাবিদার নিজে অনুপস্থিত ও জনৈক যুবক নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে বর-কণের উপস্থিতি ছাড়াই বিয়ে পড়ান বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে
কর্ণফুলী ইউএনও তার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর ১ নং (খ) চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার শূন্য পদে ভুয়া কাজীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে ৪৪ পৃষ্ঠার সংযুক্তিসহ ৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

৩৭৮ স্মারকের ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি তিনি জেলা রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও অনুলিপি প্রেরণ করেন।

এতে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত অভিযোগকারী চরলক্ষ্যার কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম, অভিযুক্ত পটিয়ার কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম ও সহযোগী কামরুল ইসলামের শুনানি, লিখিত বক্তব্য ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করার কথা জানান।

পরে শুনানি শেষে ডিসির কাছে পাঠানো ইউএনওর প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার ইউনিয়নের কাজী মৌলানা নূরুল হুদা অবসর গ্রহণের পর থেকে পটিয়ার কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম কয়েকবার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় হাইকোর্টে রিট, কনটেম্পট পিটিশন, সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীলসহ পাঁচটি মামলা হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে পটিয়ার কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম চরপাথরঘাটার অতিরিক্ত কাজীর দায়িত্ব দাবি করলেও শুনানিতে কাবিননামার বালাম বই কোথায় রাখা হয় তা জানাতে পারেননি। কাজী অফিসের চাবিও তাঁর কাছে রক্ষিত নেই। কাজীর সাইনবোর্ডে তার সহযোগী কামরুল ইসলাম নামক এক যুবকের ফোন নম্বর ঝুঁলিয়ে রেখেছেন।

প্রতিবেদনে আরও জানান, আইনগত ভাবে এরূপ সহযোগী রাখার সুযোগ না থাকলেও পটিয়ার কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম সহযোগী হিসেবে জনৈক কামরুল ইসলাম কে দিয়ে অফিস ব্যবস্থাপনা করেন, বালাম লিখান, বর-কণের উপস্থিতি ছাড়া নিকাহ রেজিষ্ট্রি (বিবাহ) করেন বলে উল্লেখ করেন।

এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে তারা লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এমনকি সহযোগী কামরুল ভবিষ্যতে নিজেকে কাজী (নিকাহ রেজিস্ট্রার) পরিচয় দিবে না বলেও জানান। কিন্তু এখনো কামরুল নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে অফিস খোলা রেখে বিবাহ রেজিস্ট্রার করছেন বলে কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলামের অভিযোগ।

এসব উদ্ভুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কর্ণফুলী ইউএনও প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন-আদালতে বিভিন্ন মামলা, শূন্য পদে কাজী নিয়োগে জটিলতা, নিকাহ রেজিস্ট্রার পরিচয়ে ভুয়া কাজী বিবাহ পড়ানো, কাজী না হয়েও সাইনবোর্ডে নিজের নম্বর লিখে প্রচার করায় জনসাধারণের মনে বৈধ কাজীর বিষয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরলক্ষ্যার কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাজী শরফুদ্দীন মো. সেলিম কিসের ভিত্তিতে চরপাথরঘাটার অতিরিক্ত কাজী দাবি করছেন, এটিসহ আমি ৮টি অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু ইউএনও স্যার কৌশলে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন। কেন এড়িয়ে গেছেন তা আমি জানি না। এমনকি দীর্ঘদিন শরফুদ্দীন সেলিম ও তার সহযোগী কামরুল কাজী পরিচয়ে বিবাহ পড়িয়ে অনিয়ম দুর্নীতি করছেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেই প্রশাসনের।’

এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘উভয় পক্ষের লিখিত বক্তব্য ও সমস্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ৪৪ পৃষ্টার সংযুক্তিসহ জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাতেই ছাড়া হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি
পরবর্তী নিবন্ধদীঘিনালায় বন্যার পানিতে ডুবে কিশোরীর মৃত্যু