চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে না হলে প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি সম্প্রতি নগরীর প্রাকৃতিক খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও উচ্ছেদ কার্যক্রম মনিটরিং করা নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি দিতে এত বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যদি প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর একটি সদিচ্ছার অপমৃত্যু হবে এবং টাকারও অপচয় হবে। চলতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে উল্লেখ করে চসিক মেয়র বলেন, নগরীর খালগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার, খাল খনন কাজ দ্রুত শুরু এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে দেওয়া বাঁধ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেটে দিতে হবে। নইলে কিছুদিনের মধ্যে শুরু হতে যাওয়া বর্ষায় নগরী জলাবদ্ধতায় ডুবে যাবে।
এদিকে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নগরবাসীর জন্য কোনো সুখবর নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৫ জুন ‘এ বর্ষায়ও মিলবে না সুফল’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শহরের পানি নিষ্কাশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাক্তাই খালের মুখে ২০১৮ সালের ৬ জুন পাম্প হাউজসহ স্লুইচ গেইট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছিল। তিন বছর শেষে এ স্লুইচ গেটের মাত্র ‘স্ট্রাকচার’ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখনো পাম্প ও গেইট বসানোর কাজ শুরু হয়নি। পাম্প ও গেট ইউরোপের একটি দেশ থেকে আসার কথা। করোনা পরিস্থিতির কারণে যা আগামী তিন-চার মাসেও আসা অনিশ্চিত। ফলে চলতি বর্ষায়ও স্লুইচ গেটের সুফল পাবে না নগরবাসী।’
ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে চট্টগ্রামবাসীর মুক্তি মিলবে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেননা পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাকি কাজ শেষ করতে মেয়াদ বাড়াতে হবে আরও দুই বছর। এ বছর টাইডাল রেগুলেটর (জোয়ার প্রতিরোধক) নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ফলে এবারের বর্ষায়ও জোয়ারের পানিতে ডুববে চট্টগ্রাম নগরী।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল প্রকল্পটির। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয় প্রকল্পের মেয়াদ। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও দুই বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে। মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৬টি খাল এবং এসব খালে সংযুক্ত আরও ২০টি খালসহ মোট ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন। ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, ছয়টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর বা স্লুইস গেইট, ১২টি পাম্প হাউজ স্থাপন, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন এবং ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ।
এক দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র অর্ধেক। যে পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটরের নির্মাণকাজ চলছে সেগুলো শেষ হবে এ বছরের শেষের দিকে। সবমিলিয়ে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হলে এ বছরও চট্টগ্রাম নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় কষ্ট করতে হবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাই আপাতত খাল ও নালা পরিষ্কার থাকলে এবং বাঁধ অপসারণের ব্যবস্থা নিলে কিছুটা হলেও নগরবাসী উপকার পাবে বলে তাঁরা মনে করেন।