চলতি বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে হারবাং পর্যন্ত এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মিত রেলপথে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাছান কাটার পশ্চিম পাশে বেশ কয়েক জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। যেসব এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি নিচে নেমে আসছে তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ভারী বর্ষায় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাছান কাটা এলাকার উভয় পাশে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। যার কারণে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ এবং বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাহাড়ের যেসব সব স্থান থেকে মাটি ধসের আশঙ্কা রয়েছে সেই স্থানগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গাইন্যাকাটা এলাকায় রেললাইনের উপর বিশাল অংশের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় রেললাইনের মাটি অপসারণ করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য প্রায় ৮ ঘণ্টা এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এ বছরও চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনের চকরিয়ার হারবাং থেকে লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অংশে রেললাইনে পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন এই রুটের যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের কয়েকজন যাত্রী আজাদীকে জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং থেকে শুরু করে লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বিশাল অংশে গভীর পাহাড় কেটে মাঝখান দিয়ে নির্মিত হয়েছে রেলপথ। এই রেলপথের উভয় পাশে এমনভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে যার প্রায় অংশে বর্ষায় মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক অংশে এখনো গাছ এবং ঘাস লাগানো হয়নি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী–১ আবু রাফি মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোছাইন আজাদীকে বলেন, গত বছর যে এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে, এ বছর এখনো সে রকম কিছু ঘটেনি। আমাদের প্রস্তুতি আছে। যে অংশে পাহাড় কাটা হয়েছে সেখানে গাছ এবং ঘাস লাগিয়ে যাতে পাহাড় না ধসে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই পাশেই গাছ এবং ঘাস লাগানো হবে। পর্যায়ক্রমে এগুলো করা হবে। তবে এখনো প্রকল্প থেকে আমাদের কক্সবাজার রেললাইনটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজে ১১ দশমিক ৯২ কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেটিই অ্যালাইনমেন্ট। লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নে প্রায় ২০টি পাহাড় কেটে ২ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট মাটি সংগ্রহ করেছিল একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অনুমোদিত পাহাড় কাটার সীমা লক্সঘন করা হয়েছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি মোহাম্মদ মারুফ জানান, এ বর্ষায় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের হাছান কাটা এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এখানে কিছুদিন আগে একটি এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এখানে কাটা পাহাড়গুলোতে এখনো কিছু লাগানো হয়নি। পাহাড়গুলো এমনভাবে কাটা হয়েছে ওইগুলোতে ঘাস পর্যন্ত জন্মায়নি। কাটা পাহাড়গুলো থেকে ভারী বর্ষণে পানির স্রোতের সাথে বিপুল পরিমাণ মাটি নিচে পড়ছে। মাটি না ধসার জন্য পাহাড়গুলোর উভয় পাশ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এভাবে পাহাড়ের মাটি রক্ষা করা যাবে না।
লোহাগাড়া স্টেশন মাস্টার দিদার হোসেন বলেন, গত বছরের মতো এ বছর এখনো পাহাড় ধস হয়নি। এখনো সবকিছু ঠিক আছে। আমরা সকাল–বিকাল রেললাইন দেখছি। ট্রেন আসার আগে সবকিছু ভালোভাবে নজর রাখা হয়।
তিনি বলেন, পাহাড় ধসের বিষয়গুলো রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ এবং বন বিভাগের লোকজন দেখেন। পাহাড় না ধসার জন্য যেসব স্থানে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে সেগুলো বন বিভাগের এবং রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের লোকজন দিতে পারে। এগুলো আমার বিষয় না।