আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। গত কয়েক বছর ধরে দেশে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। এই মৌসুমটিতে বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমের সাথে ঝিরি ঝিরি কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এটি এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সহায়ক। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে এডিস মশা এবং এতে মশার বংশবিস্তারও তরান্বিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে, ডাবের খোসা এবং পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারে জমে থাকা পানিতেও মশার বংশবিস্তার হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আক্রান্তের হার বাড়ছে। চলতি মে মাস এখনো শেষ হয়নি। এরইমধ্যে গত মাসের চেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন যেহেতু বৃষ্টির মৌসুম, তাই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৪ জনই পুরুষ। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন ১ জন। এছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৩০ জন। এরমধ্যে নগরীতে ১০৭ জন এবং উপজেলায় ১২৩ জন। মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া গত এপ্রিলে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৩৩ জন। চলতি মে মাসের গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ জন। অর্থাৎ গত মাসের তুলনায় চলতি মাসের এখন পর্যন্ত সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ আঙিনা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটির আসলে কোনো দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত বছর বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট ডেন–২ এর সাব ভ্যারিয়েন্ট কসমোপলিটনে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার বেশি ছিল।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত মাসের তুলনায় ডেঙ্গুর আক্রান্তের হার বাড়লেও সেটি আতঙ্কের নয়। কারণ এখন প্রতিদিন ২–৪ জন করে আক্রান্ত হচ্ছে। সামনে যেহেতু বর্ষা মৌসুম, তাই নাগরিকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তাদের মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেহেতু আমাদের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা আছে, তাই ডেঙ্গুর হার বাড়লেও আতঙ্কের কিছু নাই। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন এবং মারা যান ৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৭ জন। মারা যান ১০৭ জন। ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন এবং ২০২১ সালে আক্রান্ত ২২১ জন এবং মারা যান ৫ জন।