নগরীতে থামছে না পাহাড় কাটা। থামানো যাচ্ছে না। রাতের আঁধারে কাটা হয় পাহাড়। কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায় চলছে পাহাড় কাটা। ভর বর্ষার বৃষ্টিকে পুঁজি করেও কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে তোড়জোড় চলে, পরিদর্শন করা হয়, মামলা হয়। জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাহাড়খেকোদের। নগরীর বায়েজিদ, আকবরশাহ এবং খুলশী এলাকার পাহাড়গুলোতে কোদাল–শাবলের হানা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার পাহাড় কাটার সময় তিন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। পাহাড় কাটার নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুই শতাধিক পাহাড় ছিল। কিন্তু কাটতে কাটতে এখন ৬০–৭০টিতে নেমে এসেছে। এগুলোতেও নিয়মিত কোদালের কোপ পড়ছে। নগরীর অন্তত ১০টি এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড় কাটা চলছে বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায়। এখানে সুযোগ বুঝে থেমে থেমে পাহাড় কাটা হচ্চে। নগরীর আকবরশাহ, পাহাড়তলী, বায়েজিদ, জঙ্গল সলিমপুর, জঙ্গল লতিফপুর, খুলশী, লালখান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড ঘিরেও চলছে পাহাড় কাটা।
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পাহাড় কাটা নতুন মাত্রা পায়। বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েও পাহাড় কাটা চলে। পাহাড় কাটা হয় বৃষ্টির সময়। পাহাড়ের পাদদেশ কৌশলে কেটে দেওয়া হয়, যাতে বৃষ্টির পানিতে উপরের পাহাড় ধসে পড়ে। জালালাবাদ, আরেফিন নগর, চন্দ্রনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে প্রথমে খেতখামারের মতো করা হচ্ছে। পরে তোলা হচ্ছে পাকা অবকাঠামো। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দফায় দফায় সতর্ক করা হলেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচটি মামলা করেছে। গত বছর ১০টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগের বছর মামলা হয়েছিল ২২টি। গত দশ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায় সাড়ে ৫শ অভিযান চালিয়েছে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে। এসব অভিযানে ৮০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পর পাহাড়খেকোরা থেমে নেই। তারা দোর্দণ্ড প্রতাপে পাহাড় কেটে শেষ করছে। ভূমিমূল্য বেড়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি এলাকাগুলো থেকে ভূমিদস্যুদের চোখ সরানো যাচ্ছে না। গতকাল দুপুরে পাহাড় কেটে আরসিসি পিলার তোলার সময় পাহাড় সুরক্ষায় গঠিত জোন–৪ কমিটির সদস্য ও খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব হোসেন পুলিশের টিম পাঠান। টিমটি খুলশী থানাধীন জালালাবাদের কাঁঠাল বাগানের রূপসী পাহাড়ে ৩ শ্রমিককে আটক করে। বিষয়টি জোন কমিটিকে জানানো হলে কমিটির আহ্বায়ক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এসিল্যান্ড (কাট্টলী সার্কেল) হুসেইন মোহাম্মদ পাহাড় কর্তনের নির্দেশদাতা ও সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন। আটক তিন শ্রমিকের জবানবন্দি রেকর্ড করে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জবানবন্দিতে শ্রমিকেরা জানান, স্থানীয় মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান প্রকাশ গাল কাটা মুজিব তাদেরকে পাহাড় কেটে কাজ করার জন্য নিয়োগ করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাহাড় কাটার তথ্য–প্রমাণ এবং গাল কাটা মুজিবের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
পাহাড় কাটা রোধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে চলেছে।
বেলা চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মনিরা পারভীন জানান, শহরজুড়ে পাহাড় কাটা চলছে। অনেক পাহাড় কাটা হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও ক্রমান্বয়ে কাটা চলছে। পাহাড় কাটার নির্দেশদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা যাচ্ছে না।