দেশজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কয়েকধাপে। বলতে গেলে সর্বত্রই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংঘাত-সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১০০ জনের মতো, আহত হয়েছে কয়েক হাজার। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার একেবারে তৃণমূল পর্যায় তথা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ায় অসহিষ্ণু ও দুর্বল গণতন্ত্রের এ দেশে দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে পারস্পরিক নির্ভরশীল গ্রামীণ জীবনের সমন্বিত সংহত ও অরাজনৈতিক রূপ নষ্ট রাজনীতিতে কলুষিত হয়ে দীর্ঘদিনের এই গ্রামীণ নির্বাচনি উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে। ফলে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাহীনতা ও সহিংসতা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সব নির্বাচনে জবরদস্তি, বিদ্বেষ, সহিংসতা এবং জবাবদিহিতাবিহীন গণতন্ত্রহীনতার মধ্যেই বিস্তৃত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা, শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ধর্মান্ধ অপশক্তি, ঘৃণায়-অবিশ্বাসে বিভক্ত হয়েছে সমাজ। এতে দুর্বল জনগোষ্ঠী নিয়ত নিপীড়িত হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে গত ১০ বছর ধরে এই অপশক্তি প্রায় নিয়মিতভাবে উজাড় করে দিচ্ছে একের পর এক সংখ্যালঘু জনপদ।
এরি ধারাবাহিকতায় বিগত শারদীয়া দুর্গোৎসবের সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বিশাল একটি গোষ্ঠীর একাংশের সুপরিকল্পিত উস্কানির ফলে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সবচাইতে বড় সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার একমাস পেরিয়েছে। ইতোমধ্যে এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে অনেকে লিখেছেন কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বিরাজমান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের অধোগতিতে, গণতন্ত্রের নামে সমাজে-অর্থনীতিতে জবাবদিহিতাবিহীন লুটপাট জবরদস্তি, ধর্মান্ধতা ও আচার সর্বস্বতার ব্যাপক বিকৃত প্রচার ও প্রসারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সমাজ মানসের অসহিষ্ণুতার আবহে এ-ধরনের ঘটনা যে অনিবার্য তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি কোথাও, বলা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মান্ধ আবহাওয়ার মধ্যেও সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ এ সহিংস অপরাধ থেকে মুক্ত ছিল, বরং প্রশাসনের বিরাট একটি অংশ এই সহিংসতার সময় নিষ্ক্রিয় ছিল কেননা প্রশাসনের লোকজন তো সমাজ বিচ্ছিন্ন কোনো উর্দ্ধাকাশের প্রাণী নয়, তারা দুর্নীতি, অনাচার, নষ্টামিতে, বিকৃতিতে পরিপূর্ণ এই সমাজেরই সৃষ্ট। শাসক দলের দৃঢ় অসাম্প্রদায়িক অবস্থান ও কমিটমেন্টই শুধু এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে তৎপর করে। দীর্ঘ বাম শাসনে পশ্চিমবঙ্গে একটিও সহিংস সাম্প্রদায়িক ঘটনা না ঘটার কারণ জিজ্ঞেস করলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু স্বভাব-সুলভ দৃঢ়তায় জবাব দিয়েছিলেন সরকার এবং প্রশাসন না চাইলে কোথাও কখনও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে এবার দেশের ও বিদেশের পত্র-পত্রিকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে মন্দির ভাঙার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ ও বিশ্বব্যাপী স্যোশ্যাল মিডিয়ায় সব দৃশ্য ও ঘটনা ভাইরাল হবার পরেও বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবকিছু বেমালুম অস্বীকার করে বসলেন। এ সব ঘটনার এক মাস অতিক্রান্ত হবার পরেও ইকবাল হোসেনের স্বীকারোক্তি আদায় হয়নি এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ধৃত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট বা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মনে হয় পরিকল্পিতভাবেই রামু, নাসির নগর, শাল্লা প্রভৃতি স্থানে সংঘটিত সহিংসতার মতো ধীরে ধীরে এবারের ঘটনাও চাপা দিয়ে দেওয়ার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে। এই সরকারের রাজনৈতিক অভিমুখ তা হলে কোন্ দিকে? অহর্নিশ বঙ্গবন্ধুর কথা বলে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অসাম্প্রদায়িক ভূমিকার বিপরীতে হাঁটার এই অবাঞ্চিত ভূমিকার জন্যেই কি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক মুসলিম জনগোষ্ঠী শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আওয়ামী লীগকে বিগত ১৯৭০ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন করে এসেছে? ১৯৭১ সালে নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে মুক্ত দেশে মাত্র ১০ মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের অক্টোবরে শারদীয়া দুর্গোৎসবে একই দিনে, একই সময়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা করে পরাজিত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের শক্তি ও অস্তিত্বের জানান দিতে শুরু করেছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তখন সরকার ঘটনাটির গুরুত্ব লঘু করে দেখেছিল। কিন্তু অন্ধ থাকলেও প্রলয় বন্ধ করা যায়নি। ’৭৫ সালের মর্মান্তিক পটপরিবর্তনের পর জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় স্বরূপে তাদের পুনরাবির্ভাব ঘটে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজজীবনে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নামে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু হলো, অর্থনীতিতে মুক্ত বাজারের নামে অবাধ লুট-পাটের ধারায় দ্রুত বিকশিত হতে লাগল কিছু লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী, সাধারণ শিক্ষার ধারাকে এমনকি প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে তুলে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নানামতের ধর্মভিত্তিক শিক্ষার ধারা প্রবল হয়ে উঠল যার মূল প্রতিপাদ্য হলো নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে কোমল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার। এতে করে বেড়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক ঘৃণায় আচ্ছন্ন কয়েকটি প্রজন্ম। এরাই এখন জামাত-হেফাজতের রাজনৈতিক পুঁজি। এরি মধ্যে সম্প্রতিক সময়ে বারবার নির্যাতিত হয়ে ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘুদের মধ্যেও তৈরি হতে চলেছে সম্প্রদায়িক প্রবণতা ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ। শাসকগোষ্ঠীর কারণে সৃষ্ট এই দুই বিপদ নাগরিক সমাজকে বিবেচনায় নিতে হবে। জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের ছাতার নীচে গড়ে তোলা এই দুর্বৃত্তায়িত সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রবল ধারায় দেখা গেল ’৯০-এর দশকে এসে ক্ষমতার সমীকরণে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, কতক যুদ্ধাপরাধীকে দণ্ডিত করেও আওয়ামী লীগ আর্থসামাজিক ভাবাদর্শগতভাবে জিয়া-এরশাদের অবস্থানে চলে গেল। ফলে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে বটে কিন্তু দলে এবং সরকারের একাংশে চর্চা চলছে লুটেরা ধর্মান্ধ রাজনৈতিক-অর্থনীতির। এ জন্যেই গত ১২ বছরে বারবার ঘটতে থাকা এক তরফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার হচ্ছে না-এবারের ঘটনারও বিচার হবে না। শাসকদল মুখে যতই সম্প্রীতির কথা বলুক সমাজ নিরপেক্ষ ভাবনা বা প্রচলিত সমাজ মানসের ঊর্ধ্বে থাকার মতো মননশীল ও দ্রোহী প্রত্যয় নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম কঠিন। অসাম্প্রদায়িক হওয়া বা মানবিকতার চর্চা একটি শ্রম, সাধনা ও মেধা সাপেক্ষ বিষয়- তা অর্জন করতে হয়।
’৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় বিএনপি সরকারের নীরব প্রশ্রয়ে এদেশে সম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কানুযায়ী ভারতের সাম্প্রদায়িক কোনো ঘটনার উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া এদেশে হয়নি। নেহেরুর আমল থেকে দীর্ঘ ৬৫ বছর কংগ্রেস ভারতে ক্ষমতায় ছিল যে দল সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়েও সেকুলার রাজনীতির চর্চা করেছে, একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে ব্যালটের শক্তির অপরিহার্যতার কারণে ১৯৫১ সালে নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির পর ভারত থেকে মুসলিমদের পাইকারিভাবে এদেশে উদ্বাস্তু হয়ে আর আসতে হয়নি। ’৬৪, ’৬৫, ’৭১ এবং ২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা, ২০১০ সালের পরে গুজব ছড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা, অর্পিত সম্পত্তির কারণে সংখ্যালঘু হয়রানি ইত্যাদি ভারতের কোনো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির কারণে হয়নি। এসব কারণে ভিটে-মাটি হারিয়ে নীরবে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ অব্যাহতভাবে চলেছে-যা গবেষণায় উঠে এসেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরোল্লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন দাঁড়ায় মোদি-অমিতদের সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তপণা ক্ষমতার রাজনীতি কারণে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়বে-তা হলে কি এখানকার সরকার, সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে প্যাসিভ ভূমিকায় চলে যাবে? প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও সংকট এখানেই। তবে কি ১৯৪৭ সালে পাঞ্জাবের মতো ধর্মের ভিত্তিতে রক্তাক্ত পথে লোক বিনিময়ের দ্বিজাতিতত্ত্বে অসমাপ্ত কাজ এখন সমাধা করতে হবে? ভারতের বর্তমানে ক্ষমতাসীন মোদি-অমিত চক্র সম্প্রদায়িক জিগির তুলে এ-ধরনের সহিংস পথে চলতে চাইছে। ১৯৬৪ সালে ক্ষমতার বাইরে থেকে বঙ্গবন্ধু ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি ও নাগরিক সমাজের হুমকিতে, প্রতিরোধে দাঙ্গা বন্ধ হয়েছিল। আমি তো মনে করি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক যে-কোনো পরিস্থিতিতে দলের অসাম্প্র্রদায়িক আদর্শের অনুসারী নিবেদিত নেতাকর্মীরা যদি প্রগতিশীলদের সাথে নিয়ে মাঠে সক্রিয় অবস্থান নেন তখন কোনো অপশক্তি সহিংসতা করার সাহস পেতে পারে না। কেননা দুর্বৃত্তরা সংখ্যায় ও নৈতিক শক্তিতে দুর্বল থাকে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সত্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরাট একটি অংশ এমনকি নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এটাকে জরুরি কর্তব্য মনে করে না।
তা হলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কোন্ পথে? এক মাত্র সহজ উত্তর হলো প্রত্যেক নাগরিকের সমান মর্যাদা ও অধিকারে ঋদ্ধ প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে, ধর্মনিরপেক্ষ বা ইহজাগতিক ভাবনায় সমৃদ্ধ সমাজ-মানসের বিকাশে তথা সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের পথে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় গণতন্ত্র ও সর্বস্তরে জবাবদিহিতার পরিবেশের কারণে, রেঁনেসার কারণে, সেকুলার ভাবনার বিকাশের ফলে ৯০ শতাংশ খ্রিষ্টান অধ্যুষিত ঐ সমস্ত দেশে সমান নাগরিক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তার কারণে বাকি পৃথিবীর সব ধর্মের লোক স্থায়ীভাবে বাস করতে আগ্রহী। প্রকৃত গণতন্ত্র ছাড়া, সবস্তরে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা ছাড়া, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা ছাড়া এদেশে সাম্প্রদায়িকতার অবসান হবে না- পৃথিবীর কোথাও হয়নি। এ হলো সঙ্কট থেকে উত্তরণের সুদূরপ্রসারী পথ। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের আশু পথ হলো ’৭২ সালের মূল সংবিধানে বিশ্বাসী সব প্রগতিশীল শক্তি, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে গণজাগরণ মঞ্চের আদলে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী একটি বৃহৎ মোর্চা গড়ে তোলা এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেক ধর্মের অসাম্প্রদায়িক মানবিক আবেদন তুলে ধরে, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে, মানবিক শিক্ষার কথা বলে সারাদেশে ব্যাপক প্রচারাভিযানে নামা। যেতে হবে গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজে, মাদ্রাসায়। অতিদ্রুত সরকারকে ধর্মসভায়, মাহফিলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে-কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা বন্ধের ব্যবস্থা ও সব সহিংসতায় অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সরকার ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা অপরিহার্য, কিন্তু তাদের বাধ্য করার জন্য সর্বাগ্রে বাম প্রগতিশীল, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। গণতন্ত্রহীনতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও সতত পরিবর্তশীল এ বিশ্বে মানুষের শ্রেয়োবোধের প্রতি আস্থা রেখে বলতে চাই মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাজয়কে চরম বলে বিশ্বাস করা অপরাধ।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
এরি মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বারবার নির্যাতিত হয়ে ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘুদের মধ্যেও তৈরি হতে চলেছে সাম্প্রদায়িক প্রবণতা ও ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ। শাসকগোষ্ঠীর কারণে সৃষ্ট এই দুই বিপদ নাগরিক সমাজকে বিবেচনায় নিতে হবে। জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের ছাতার নীচে গড়ে তোলা এই দুর্বৃত্তায়িত সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রবল ধারায় দেখা গেল ’৯০-এর দশকে এসে ক্ষমতার সমীকরণে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, কতক যুদ্ধাপরাধীকে দণ্ডিত করেও আওয়ামী লীগ আর্থসামাজিক ভাবাদর্শগতভাবে জিয়া-এরশাদের অবস্থানে চলে গেল। ফলে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে বটে কিন্তু দলে এবং সরকারের একাংশে চর্চা চলছে লুটেরা ধর্মান্ধ রাজনৈতিক-অর্থনীতির। এ জন্যেই গত ১২ বছরে বারবার ঘটতে থাকা এক তরফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার হচ্ছে না-এবারের ঘটনারও বিচার হবে না। শাসকদল মুখে যতই সম্প্রীতির কথা বলুক সমাজ নিরপেক্ষ ভাবনা বা প্রচলিত সমাজ মানসের ঊর্ধ্বে থাকার মতো মননশীল ও দ্রোহী প্রত্যয় নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম কঠিন। অসাম্প্রদায়িক হওয়া বা মানবিকতার চর্চা একটি শ্রম, সাধনা ও মেধা সাপেক্ষ বিষয়- তা অর্জন করতে হয়।