বিদেশ থেকে নিত্য নতুন ফল আমদানির কারণে আমাদের দেশের ফলগুলির কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে আমাদের প্রাচীন ফলগুলি হারাতে যাচ্ছি। এদেশে বর্তমানে ৩ ডজনের অধিক ফল রয়েছে, যেগুলোর কোনোটি একেবারেই পাওয়া যায় না, আবার কোনোটি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তার মাঝে তাল, খেঁজুর, আমড়া, চালতা, তেঁতুল, আমলকি, গোলাপজাম, করমচা, বেতফল, শরীফা, পাইন্ন্যাগুলা (বইঁচি), পুতিজাম, খেজুর, কাঠবাদাম, গাবফল, জামরুল, কামরাঙ্গা, জলপাই, ডুমুর, লটকন, ডালিম, ডেউয়া, বরই, বেলম্বু ইত্যাদি। গ্রামে খালের পাড়ে ডেউয়া, করমচা, বাড়ির আঙ্গিনায় আমলকি, আমড়া, বরই, ডালিম, বেলম্বু প্রকৃতির এক বৈচিত্র্যময় সমাবেশ। আবার এসব ফলে রয়েছে নানা রকম পুষ্টি উপাদান। অধিকাংশ বাংলাদেশের লোকেরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অথচ এসব ফলই আমাদের পুষ্টির সমস্যা অনেক লাগব করতে পারে। উক্ত ফলগুলির অবলুপ্তির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে প্রয়োজনের তুলনায় জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে; দেশে সুষম খাবার সম্পর্কে পুষ্টি তথ্য সম্বন্ধে আগের চেয়ে জনগণ অধিক সচেতন হলেও পুষ্টি তথ্যে এখনও অপ্রতুলতা রয়েছে; অপ্রধান এসব ফল সমুহের পুষ্টিমান, চাষ ও ব্যবহার সম্বন্ধে অজ্ঞতা এবং সর্বোপরি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অভাব।
‘ঐখানে তোর দাদীর কবর, ডালিম গাছের তলে’–পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের অমর একটি লাইন। কিন্তু পাশ্চাত্যে সাস্কৃতির প্রভাবে এমন অনেক লাইন, অনেক ছন্দ, অনেক কবিতা অনেক গান, অনেক উপকথা হারাতে বসেছে আমাদের এলাকা থেকে। তেমনিভাবে আমাদের অবহেলার ও অজ্ঞতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এসব সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত কিছু প্রাচীন বাংলার ফল। ছন্দের মাঝে উল্লেখ্য ডালিম গাছ সব বাড়ির আঙ্গিনায় কল্পনা করা মুশকিল। কদাচিৎ দু‘একটি বাড়িতে দেখা যায়।
এছাড়াও উক্ত ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তা থেকে বিভিন্ন বস্তু তৈরীর জন্য শিল্প স্থাপন করা যেতে পারে। ফলগুলি স্বল্প পরিসর জায়গায় জন্মেও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে। এ দেশে বৈচিত্রময় ফলের সমাবেশ রয়েছে। এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া এসব ফলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তাই সবাই মিলে আমাদের এগুলোকে রক্ষা করা নৈতিক দায়িত্ব।
ফলগুলো ধরে রাখার জন্য আমরা এর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল, আচার–চাটনী প্রভতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পুষ্টি ও কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানে এসব ফলগুলোর সরস বর্ণনা ও গুনাগুন তুলে ধরা যেতে পারে। পার্ক ও সরকারি খামারে পরিকল্পনা মাফিক ফলগুলো জন্মানো যেতে পারে। এতে বাগানের বা পার্কের সৌন্দর্য বাড়বে এবং তার সঙ্গে ফলের পরিচিতিও হবে।












