ও রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ,,,গুন গুন করে মিষ্টি কন্ঠে গাইছে বর্ণ। আজ চাঁদ উঠলে কাল ঈদ। বর্ণ গান গাইতে গাইতে টুস ঝুন করে কি যেন ভেঙ্গে ফেলল,, ওয়াহ করে খুশিতে চিৎকারও দিল। বাবা বাবা দেখ আমার অনেক টাকা। রুমে গিয়ে দেখলাম সে তাঁর মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ফেলল। গত ঈদে পাওয়া ঈদ সেলামীর সব টাকা সে এক এক করে ঐ ব্যাংকে ফেলেছে। প্রতিদিন ইশকুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে সে ব্যাংক এ কয়েন জমিয়েছে। একটু পর দেখলাম পাশের বাসার মালিহা, আনিতা, রাহা ও হুমাইরা এসে হাজির। ওদের হাতেও দেখলাম একটা একটা মাটির ব্যাংক কি ব্যাপার ? মা মণিরা তোমরা দেখি চাঁদ রাতে সবাই মাটির ব্যাংকের উপর হামলা শুরু করেছ। ঘটানা টা খুলে বলতো মেয়েরা। বর্ণ বলল, বাবা তোমাকে বলা যাবে না। মাটির ব্যাংকের রহস্য । ওরা চার বান্ধবী মিলে দুপুস ধাপুস টুস টাস করে চার চারটা ব্যাংক ভেঙ্গে ফেলল,,,রাতভরে শুরু হলো চার ব্যাংকের টাকা গুনা প্রতিযোগিতা। কার ব্যাংকে কত বেশি জমিয়েছে। বর্ণ–র ব্যাংকে দুই হাজার হুমাইরার ব্যাংকে আঠারোশ মালিহার ব্যাংকে পনেরশ,,আনিতার ব্যাংকে বারোশ টাকা। সব মিলিয়ে ছয় হাজার পাঁচশত টাকা জমিয়েছে। বেশির ভাগই কয়েন। ভাজ করা কিছু নতুন নোট আছে । সবগুলো থলে ভর্তি করে পুঠলি করা হলো। কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠলে দেখি ভাতিজি সাইমা কান্তা এসে হাজির। চারজনই আপু আপু বলে কান্তার কানে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল আপু ছয় হাজার পাঁচশত টাকা মাত্র। কান্তা বলল সমস্য নেই তুরা অনেক টাকা সঞ্চয় করেছিস। বর্ণ এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলল তুমি আমাকে ঈদের সেলামীটা অগ্রিম দাওনা বাবা। কেন আজ তু চাঁদ রাত আগামীকাল দিলে হয় না। আহা বাবা দাওনা । বর্ণ বলল বাবা তোমাকে একটু পরে ঈদ সেলামীর রহস্য বলব। একটু অপেক্ষা করো। ওরা পাঁচজনকে একহাজার টাকা ঈদসেলামী অগ্রিম দিলাম। সবাই এসে পা ছুঁয়ে সালাম করল।,,কি খুশি পাঁচজনই দেখলাম হাসা হাসি খুনসুটি করতে করতে বাড়ির ছাদে গেল। শুভ্র আকাশে মাঝে মাঝে মেঘের বেলা,দু একটা তারা ঝিলমিল করছে।,মেঘের আড়ালে আকাশের পেট ছিঁড়ে যেন ভেসে উঠেছে ঈদের নতুন চাঁদ । সবাই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ঐ যে ! ঐ যে ঈদের চাঁদ। পুকুর পাড়ে টুস টুস ফটকা বাজির শব্দ। দুষ্টু ছেলে দল মেতেছে আনন্দে। সবাই পাল্লা দিয়ে চিৎকার করছে চাঁন উল্ল্যাহ চাঁন ঊল্ল্রাহ মানে চাঁদ উঠেছে। মাঝে মাঝে আঞ্চলিক ছড়া ও বলছে একে অপরকে,,আজিয়া রোজা হালিয়া ঈদ বর্ণ কান্দে ফিঁদ ফিঁদ। হাসা হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে সবাই। কেউ কেউ খড়ের গাদার ভিতর লুকিয়ে থাকছে দু একজন এসে তার গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সত্যি গ্রামে ঈদ করার মজাই অন্যরকম। কি আনন্দ আকাশে বাতাসে যেন আনন্দের ফোয়ারা বইছে চারিদিকে। ওদের আনন্দে যেন আকাশের চাঁদ ও নেমে এসেছে। পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে ঝিলিমিলি করছে চাঁদ।
একসময় কান্তা সবাইকে নিয়ে মার্কেটে গেল ঘন্টা দু এক পরে দেখি সবাই নতুন জাামার বিশাল একটা পটলা নিয়ে হাজির। কিরে এটা কিসের পটলা এতো কাপড় কার জন্য। বর্ণ বলল বাবা বলেছিলাম না ঈদসেলামীর রহস্যা। হুমাইরা ও মালিহা দুজনে মিলে লিস্ট করল। পাশের বস্তিতে,ওরা কুড়ি জন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের দিনে নতুন জামা বিতরণ করবে। অবাক ও বিস্মিত হলাম ছোট ছোট শিশুদের মহৎ আয়োজন দেখে। এসবের নেতৃত্য দিচ্ছে আবার কান্তা। কান্তা বলল চাচ্চু আমদের কিটকেট একটা গ্রুপ আছে তাছাড়া আমরা “বর্ণের–হাতে খড়ি” নামে একটা হেল্পলেস চাইল্ড ইশকুলও করেছি। সপ্তাহে তিনদিন আমরা সবাই মিলে ওদের কে পড়াই। গর্বে বুকটা ভরে গেল। সত্যি প্রশংসার দাবিদার। দেশের সবাই যদি ওদের মতো ভাবতো। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ভালোবাাসর হাত বাড়িয়ে দিত সোনার বাংলা সত্যি সোনাই হতো। ওরাও সুযোগ চাই মানুষ হতে। কান্তাকে বললাম মা তোমাদের ইশকুলটা কোথায় ? আমি ও তোমাদের সাথে ঐ ইশকুলটা দেখতে যাব। সে বলল চাচ্চু ঐ যে পাহাড়তলীর রেলওয়ে যাদুঘর এলাকার খোলা বারান্দায় আমাদের হেল্পলেস চাইল্ড ইশকুল। কখনও কখওন বা গাছের নিচে কিংবা খোলা আকাশের নিচেও বসে আমরা শিশুদেরকে পাঠ দান করি। বর্ণ এসে বলল,,বাবা আমরা যে গত ঈদে ঈদসেলামী পেয়েছিলাম, সেই টাকা মাঠির ব্যাংকে জমিয়ে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য নতুন জামা ক্রয় করলাম ঈদের দিন সকালে ওঠা বিতরণ করা হবে। বর্ণকে বললাম এই বুঝি তুদের ঈদসেলামীর রহস্য ।