হাটহাজারীর মির্জাপুরে এক দম্পতির ভালোবাসায় বাড়ির ছোট্ট উঠান যেন হয়ে উঠেছে পদ্মের স্বর্গরাজ্য। দেশি বিদেশি বিরল ৯০টিরও বেশি প্রজাতির পদ্মের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে গড়া এই বাগান এখন কেবল সৌন্দর্যের উৎস নয় বরং এক সফল বাণিজ্যিক উদ্যোগের উদাহরণ।
সাধারণত পদ্ম বললেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে বিশাল বিল বা পুকুরের ছবি। কিন্তু এই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুরের শ্রী চন্ডী দাশ আচার্য এবং তার স্ত্রী মুন্নী আচার্য। তাদের বাড়ির ছোট্ট উঠোনে চোখ রাখলে মনে হবে যেন এক টুকরো পদ্মের বিল নেমে এসেছে লোকালয়ে। গোলাপি, সাদা, লাল, হলুদ–নানা রঙের শত শত পদ্ম একসঙ্গে ফুটে তৈরি করেছে এক মনোরম দৃষ্টি জুড়ানো দৃশ্য। প্রায় লক্ষ টাকা খরচ করে শখের বসে তারা এই পদ্ম সংগ্রহ শুরু করেন। দেশি–বিদেশি মিলিয়ে এখন তাদের বাগানে রয়েছে ৯০টিরও বেশি প্রজাতির বিরল পদ্ম। এই রঙিন বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান শত শত উৎসুক দর্শনার্থী। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আসে মৌমাছি আর ভ্রমরের দল। এই স্বপ্নের বাগানের পেছনে রয়েছে মুন্নী আচার্যের অক্লান্ত পরিশ্রম। স্বামী শ্রী চন্ডী দাশ আচার্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি ছুটির দিনে বাগানের কাজ করলেও, মুন্নী আচার্য প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন এই পদ্মের পরিচর্যায়। চারা লাগানো, পানি দেওয়া, রোগবালাই দমন–সব দায়িত্বই তিনি একা হাতে সামলান। তার ভালোবাসা আর যত্নে এই শখ এখন আর শখ নেই, এটি তাদের আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। পদ্ম ফুল এবং চারা বিক্রি করে তারা এখন বাড়তি আয় করছেন। তবে আর্থিক স্বচ্ছলতার চেয়েও তাদের কাছে বড় হলো এই সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে পাওয়া অপার প্রশান্তি। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে এই দম্পতি যে আনন্দ পান, তার কোনো তুলনা নেই।
হাটহাজারীর মির্জাপুরের এই ছোট্ট পদ্ম রাজ্য এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু। দর্শনার্থীরা কেবল পদ্মের সৌন্দর্য দেখেই মুগ্ধ হন না, বরং শখকে কীভাবে পরিশ্রম ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সফল উদ্যোগে পরিণত করা যায় সেই শিক্ষাও নিয়ে যান। শ্রী চন্ডী দাশ এবং মুন্নী আচার্য দম্পতির এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ যেন প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কের এক অসাধারণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।