বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হয়ে উঠুক রোল মডেল

‘প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা’

| সোমবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা’। রীতিমত অভানীয় একটি কাজ। ৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নগরে শুরু হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা, যা বাংলাদেশে প্রথম। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সহযোগিতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এ সেবা চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। নগরের ২ নম্বর গেট কসমোপলিটন আবাসিক এলাকায় স্থাপিত বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয়ে পাওয়া যাবে এ সেবা। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রথমদিন ২৭ জন চিকিৎসেবা নিয়েছেন। উল্লেখ করা দরকার যে, চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণ কর্ণফুলী নদী বাসাবাড়ি ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যে প্রতিদিন ভরাট হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিক টন গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক, পলিথিন এবং বন্দরের জাহাজ সংক্রান্ত বর্জ্য খাল ও নালা হয়ে কর্ণফুলীতে পড়ছে। আজাদীতে প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে প্রতি মাসে ৬৬ হাজার টন বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়ছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ আরো বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তারা একে বলছেন ‘বর্জ্যের স্রোত’। বিভিন্ন গবেষণা, সরকারি সংস্থার নানা উদ্যোগ, আলোচনা; কোনো কিছুতেই নদীতে আবর্জনা পড়া থামানো যাচ্ছে না। এছাড়া দখল, দূষণ তো আছেই। নদীর প্রস্থ কমেছে, নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক গতি। জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। শুধু জলজ প্রাণী কিংবা জীববৈচিত্র্য নয়, চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে। কর্ণফুলীতে ‘বর্জ্যের স্রোত’ থামবে কীভাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হলে নগর, শিল্প ও বন্দর তিন খাতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এক খাতে আনতে হবে। তারা আরো কিছু উদ্যোগের কথা বলেন। আর সিটি মেয়র বলছেন, ময়লা যাতে নদীতে না যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা’র উদ্যোগ।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয়টি স্থায়ী। ‘প্লাস্টিক কেয়ার’ প্রকল্পের আওতায় এখানে সারা বছর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন প্রাথমিকভাবে তাদের কুড়ানো প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এই সেবার মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ওষুধ ও ল্যাব টেস্ট সুবিধা রয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য রিসাইক্লেবল বর্জ্যেও বিনিময় করা যাবে। শহরের প্লাস্টিক দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে ‘প্লাস্টিক কেয়ার’ প্রকল্প, একইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত হল। এদিকে বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয় ও বর্জ্যের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা কর্মসূচির উদ্বোধনকালে সিটি মেয়র নিজেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে ৫ জন রোগীকে সরাসরি নিজেই চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসবেন বলে জানান। এসময় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন দীর্ঘ সময় ধরে তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়ার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এই সহযোগিতা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। আজকের এই ইনোভেশন বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি রোল মডেল হিসেবে থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। অনেক সময় দেখা যায়, ভালো উদ্যোগ শুরু হলেও দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার কারণে তা মাঝপথেই ভেস্তে যায়। তাই এই ধরনের প্রকল্পকে কার্যকর রাখতে স্থানীয় সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। পাশাপাশি সামাজিকসাংস্কৃতিক সংগঠনসহ স্কুলকলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ছোটবেলা থেকেই বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে ভাবতে শেখে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা কেবল একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নয়এটি দারিদ্র্য হ্রাস, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত। শহরের বস্তিবাসী বা নিম্নআয়ের মানুষ, যারা প্রতিদিন সামান্য সঞ্চয়ে টিকে থাকেন তাদের জন্য এই সেবা বিশেষ কাজে আসবেতা নিশ্চিত।

বলা জরুরি যে, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারে দিন দিন কর্ণফুলী নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে এই নদীর মতো অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের মতো অন্যান্য সামাজিক সংগঠনকে এ ধরনের আয়োজনে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই, শুধু সিটি করপোরেশন নয়, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিটি নাগরিক পালন করুক তাঁর দায়িত্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে