বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী নিয়োগে চলে ঘুষ স্বজনপ্রীতি : টিআইবি

| বুধবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

দেশের সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কর্মী নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। গতকাল মঙ্গলবার ‘চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ৫৫ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-কর্মীর নিয়োগ হয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে; ৪৬ শতাংশ স্বজনপ্রীতি, ৪২ শতাংশ প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে এবং ১৪ শতাংশ কর্মীর নিয়োগ সরাসরি ঘুষের মাধ্যমে হয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে দুই হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন, পাশাপাশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও পুনর্চক্রায়নযোগ্য চিকিৎসাবর্জ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ টিআইবির। খবর বিডিনিউজের। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআরবির রিসার্চ ফেলো মো. নেওয়াজুল মাওলা। দেশের ৪৫টি জেলার ১৮১টি হাসপাতাল, ৩৮ সিটি করপোরেশন-পৌরসভা, ১২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ৯৩ জন কর্মীর তথ্যের উপর এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী নিয়োগে এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দুর্নীতি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই টাকার ভাগ পান। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ পেতে একজন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মীকে পাঁচ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা দিতে হয়; মেয়র, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে কর্মচারীরা এই টাকা নেন। এছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৮ সালের চিকিৎসাবর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা অনুযায়ী বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ৬টি নির্দিষ্ট রঙের পাত্র রাখার নির্দেশনা থাকলেও জরিপের ৬ শতাংশ হাসপাতালে তা নেই। হাসপাতালের ভেতরে যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী সব ধরনের বর্জ্য একত্রে বালতি-গামলায় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন। ৬৬ শতাংশ হাসপাতালে বর্জ্য মজুতকরণের নির্দিষ্ট কক্ষ নেই। ৪৯ শতাংশে অটোক্লেভ যন্ত্র নেই।

এসব হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ পরিশোধন না করেই পুনর্ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালে তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকা বাধ্যতামূলক হলেও ৮৩ শতাংশ হাসপাতালে তা নেই। যে ১৭ শতাংশ হাসপাতালে ইটিপি আছে, এর ১৬ শতাংশ হাসপাতালে তা সচল নয়। জরিপের আওতায় আসা সিটি করপোরেশন এবং ৭৭ শতাংশ পৌরসভায় ‘চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনায়’ আলাদা বরাদ্দ নেই। ২৩ শতাংশে ‘পৌরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ একটি উপখাত হিসেবে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার’ জন্য বছরে ১-৮ লাখ টাকা খরচ করে।

বাজেট ঘাটতির কারণে হাসপাতালগুলোর আধুনিক প্রযুক্তির ইটিপি ও ইনসিনেরেটর ক্রয় করার সামর্থ্য নেই; ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত বিদ্যুৎবিলের অজুহাতে হাসপাতালে ইটিপি, ইনসিনেরেটর, অটোক্লেভসহ বর্জ্য শোধন ও বিনষ্টকারী যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না বলে উঠে এসেছে টিআইবির গবেষণায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাগজে কলমে কিছু আইন এবং নীতিমালা থাকলেও পুরো খাতটিতে অরাজকতা চলছে। কোনো জবাবদিহিতা নাই। আইন ও বিধিমালাগুলো প্রতিপালনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি। সুশাসনের সাতটি নির্দেশিকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা রয়েছে, ঘাটতি রয়েছে। সেখানে সুশাসনের একটা উদ্বেগজনক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে দুর্নীতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার টেস্টে ভারতকে হারানোর স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধজামায়াতের আমির নতুন জঙ্গি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক : পুলিশ