গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আর্থিক বরাদ্দ কমে যাওয়ায় নানামুখী সংকটে পড়েছে মহালছড়ির একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা। দুর্গম পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকে ঝরে পড়া রোধে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, পোশাক, শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। বরাদ্দ চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। আগের মতো সব সুযোগ–সুবিধা চালুর দাবি শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, দুর্গম পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকে ঝরে পড়া রোধে ১৯৮৬ সালে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে আবাসিক ছাত্রাবাস চালু করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ছাত্রাবাসের সার্বিক পরিচালনা ব্যয় বহন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মহালছড়ি আবাসিক ছাত্রাবাসে ৬২ জন ছাত্র ও ৩৮ জন ছাত্রী আবাসিক সুবিধা নিয়ে প্রাথমিকে পড়াশোনা করে। তারা প্রত্যেককে মহালছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে তিনবেলা খাবারের পাশাপাশি পোশাক, ওষুধ, ব্যাগ, খাতা কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণে দেওয়া হত। তবে গত দুই বছরের বেশি সময় আর্থিক বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তিনবেলা খাবার ছাড়া বাকি সব সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে জেলা পরিষদ। এতে বিপাকের পড়েছে শিক্ষার্থীরা। আগের মতো সব সুযোগ সুবিধা চালুর দাবি তাদের।
আবাসিক ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, মন্তোশাহ ত্রিপুরা, মাইকেল ত্রিপুরা বলে, আগে আমরা স্কুল থেকে ব্যাগ, পোশাক, জুতাসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে পেতাম। এখন কিছু পাই না। আগের মতো সব সুবিধা চালু করা হোক।
ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী কোহেলিকা ত্রিপুরা, তপন ত্রিপুরা, ববিতা ত্রিপুরা, অনালীপি ত্রিপুরা বলে, আমাদের গ্রাম থেকে বিদ্যালয় অনেক দূরে। তাই আবাসিক ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা করি। আগে এখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতাম। এখন শুধু বিনামূল্যে খাবার পাচ্ছি। বাকিসব সুবিধা বন্ধ।
বরাদ্দ না থাকায় নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানান ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও মহালছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনমনি চাকমা। তিনি বলেন, দুর্গম পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে আবাসিক ছাত্রাবাসটি চালু করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে জেলা পরিষদ থেকে খাবার ছাড়া অন্য কোনো খাতে বরাদ্দ মিলছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা আগের মতো পোশাক, ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ পাচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। পাশাপাশি ছাত্রাবাস পরিচালনায়ও তৈরি হয়েছে নানা সংকট। ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নোটিশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছি না। বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিলে শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়বে। সংকট উত্তরণে এককালীন বরাদ্দসহ জেলা পরিষদের সহায়তা চান তিনি।
বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অলক সেন বলেন, গত দুই বছরের বেশি সময় যাবত বিদ্যালয়ের বরাদ্দ কমে গেছে। কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ পাচ্ছি। অন্যখাতে বরাদ্দ বন্ধ। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টিটন খীসা বলেন, গত দুই অর্থ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আমরা এবারও চিঠি দিয়েছি। এবার বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিদ্যমান যে সংকট রয়েছে তা কেটে যাবে।