রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানার ফোরম্যান জিল্লুর রহমান। তদবির করে বরাদ্দ নেন পাহাড়তলীর সেগুন বাগান এলাকায় রেলের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এফ/৩ নম্বরের বাংলোটি। বরাদ্দ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সেই বাংলোর বড় একটি অংশ গরুর খামারের জন্য স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী কাউসারের কাছে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম এবং মাসিক ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেন।
জিল্লুর রহমানের সাথে চুক্তি হওয়ার পর ওই গরু ব্যবসায়ী লোকচক্ষুর অন্তরালে ১৪/১৫ জন শ্রমিক দিয়ে খামার নির্মাণের কাজ শুরু করেন। স্থানীয় দুই যুবক বিষয়টি এই প্রতিবেদককে জানান গত ১৪ এপ্রিল।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলশী থানাধীন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় সেগুন বাগান এলাকায় বিশাল জায়গাজুড়ে অবস্থিত এফ/৩ নম্বরের বাংলোর সামনে গাছ কেটে গরুর খামার নির্মাণের কাজ করছেন বেশ কিছু শ্রমিক। বিশাল এলাকা জুড়ে দুটি টিনশেড খামারের চারদিকে দেয়াল, উপরে লোহার অ্যাঙ্গেলে টিনের ছাউনির কাজ শেষ হয়েছে। এখন শ্রমিকরা নিচের ফ্লোর ঢালাই ও আস্তর করছেন।
রেলওয়ের বাংলো বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, আড়াই হাজার বর্গফুটের বাংলোগুলো বরাদ্দ পান রেলের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা। দুই হাজার বর্গফুটের বাংলো বরাদ্দ পান দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারা। তবে রেলের দশম গ্রেডের কর্মকর্তারাও বাংলো ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাবেন। কিন্তু জিল্লুর রহমান যে বাংলো বরাদ্দ নিয়েছেন সেটি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বাংলো। এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম আজাদীকে বলেন, খুলশী সেগুন বাগান এলাকায় রেলের এক কর্মচারী তার বরাদ্দপ্রাপ্ত বাংলোর ভেতরে গরুর খামারের জন্য ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন ডিএন-২। আমরা সোমবার গিয়ে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করব। এই ধরনের কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি আজ (গতকাল)। জানার পর আরএনবির সদস্যদের নিয়ে বাংলোর ওই এলাকায় গিয়েছি। পুরো বিষয়টি দেখেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা রবি-সোমবারের দিকে এটি উচ্ছেদ করব। আর যে কর্মচারী এমন কাজ করেছেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হবে।
বাংলো বরাদ্দ পাওয়া পাহাড়তলী কারখানার এসএইই জিল্লুর রহমান বলেন, আজকে ডিএন-২ স্যারসহ অন্যান্য স্যাররা এসেছিলেন। তাদের আসার পর বাংলোর ভেতরে যে খামারটি করেছি সেটির টিনগুলো খুলে ফেলেছি। বাংলোর ভেতরে খামার করতে দিলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বাংলোর কাছে আরো দুটি খামার আছে। ওই দুটি খামার কে করেছে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা জোর করে করেছে।
রেলের আইন অনুযায়ী রেলওয়ে থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত কোনো বাংলো, বাসাবাড়ি ও লিজ নেয়া জমি নিজে থাকা এবং ব্যবহার করা ছাড়া ভাড়া, উপ-ভাড়া, বিক্রি কিংবা আংশিক হস্তান্তর কোনোটিই বৈধ নয়।
এমন ‘নীতিহীন, বিবেক বর্জিত কাণ্ড’ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আগে কোনো সময় ঘটেনি বলে জানিয়েছেন একই এলাকায় রেলের বরাদ্দপ্রাপ্ত কোয়ার্টারে থাকা দুই কর্মকর্তা।