একদিনের বয়কট শেষে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ফেরার পর হাসিমুখে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। কেউ কেউ তাদের সঙ্গে করমর্দন করেছেন, কেউবা বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করে নিরপেক্ষ থাকবেন বলে আশ্বস্ত করায় জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে প্রবেশ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ। মিলনায়তনের দরজার সামনেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে শুভেচ্ছা জানান। তারা হাসিমুখে করমর্দন করেন। পরে জামায়াত নেতৃবৃন্দ হেঁটে হেঁটে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও জামায়াতের নায়েবের আমীরের সঙ্গে করমর্দন করেন, শুভেচ্ছা জানান। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জামায়াতের নায়েবের আমীরের সাথে কুশল বিনিময় করে বলেন, ভাই একেবারে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন। আমরা সবাই একসাথে নতুন বাংলাদেশ গড়ব। আরেক নেতার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হাসতে হাসতে বলেন, এটা কিছু না… আমাদের সবাই এক আছি, এক থাকব।
বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেন ও জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাসের কাছে গিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর কুশল বিনিময় করেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে জামায়াতের এক নেতাকে বলতে শোনা যায়, এটা কিছু না, একটু মান–অভিমান আরকি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মিলনায়তনে প্রবেশ করেন সাড়ে ১১টার কাছাকাছি সময়ে। শুরুতেই তিনি জামায়াতের নায়েবের আমীর আব্দুল্লাহ তাহেরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। বয়স নিয়ে রসিকতা করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমি ৭০ আর উনি ৭১।
এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকার জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে টেনে নিয়ে এসে সালাহউদ্দিন আহমদ আলোকচিত্রীদের বলেন, এবার ভালো করে ছবি উঠান ভালো করে উঠান। আলোচিত্রীরা এসময় তাহের, সালাহউদ্দিন ও নাহিদের হাস্যোজ্জ্বল মুখচ্ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বৈঠকে বিএনপির সালাহউদ্দিনের পাশের আসনটিতে বসেন জামায়াতের তাহের। এর পরের আসনটি এনসিপির নাহিদের। এরপরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, বিএনপির অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জামায়াতে ইসলামীর হামিদুর রহমান আযাদ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বসেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য অংশ নেননি। পরে জাময়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বৈঠকটি বয়কট করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান আযাদ বলেছিলেন, আমরা অন প্রোটেস্ট বৈঠকে যাইনি।
বৈঠকে ফেরার ব্যাপারে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা বিস্মিত যে, আমরা ২৪ ঘণ্টা আসি নাই, এর কারণটা বের করতে পারেন নাই। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং আপত্তি জানিয়ে একটা বিবৃতি আমরা দিয়েছি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছেন, অ্যাওয়ার্ড আনার জন্যে, টাকা ফেরত আনার জন্যে এবং ওনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের বৃহত্তর দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে একটা বৈঠক হয়। এটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তাহের বলেন, নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে কথা বলেছেন এটার ব্যাপারেও তেমন কোনো আপত্তি আমাদের নেই। কারণ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তাব আমরা করেছি। সুতরাং ডিসেম্বরে করা হলেও আমাদের দাবির মধ্যে পড়ে, এখন কড়া করে যে ফেব্রুয়ারি কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও আমাদের প্রস্তাবের মধ্যেই। এখানেও কোনো আপত্তি নেই।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে না আসার কারণ তুলে ধরেন তিনি বলেন, আমরা যেখানে প্রশ্ন তুলেছি, উনি জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন সেই ভাষণে একটা তারিখ ঘোষণা করেছেন, এখানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তারিখ পরিবর্তন হতেই পারে। বিএনপি একটি বড় দল তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তারিখ পরিবর্তন হতেই পারে, এখানেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হলো, এখানে ভালো হইতো, তিনি টেলিভিশনে (জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ) কথা বলেছিলেন, এখন বাংলাদেশে এসে সেটাকে রিভাইস করতে পারতেন। কিন্তু সেটা উনি করেন নাই।
জামায়েতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, তিনি একটি দলের সাথে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে কিনা আমাদের জানা নাই। বিভিন্ন দেশে সরকার প্রধানের সাথে সংসদের প্রধান বিরোধী দল বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সাথে বৈঠক হয়। তখন তাদের একটা স্ট্যাটাস থাকে। এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রে ১০০ এর বেশি দল আছে। তাহলে তো এমন এক কালচার তৈরি হবে উনি যার সাথে কথা বলবেন, একটা যৌথ বিবৃতি করতে হবে। আমরা মনে করি এটা নজিরবিহীন ছিল, শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, সকল দলই বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতিতে আমাদের আপত্তি, বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষা হারিয়ে ফেলায় ঐকমত্য কমিশন এগুতে পারবে না দাবি করে তাহের বলেন, আমাদের সেই ধারণা হয়েছে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে যে সংস্কার কমিশন আছে, এখানেও তারা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারবে না। এটা অনেকটা ‘পর্বতের মুষিক প্রসব’ করার মত পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এর কার্যকারিতা হারাবে। সে কারণে আমরা কাল আসিনি, প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আসিনি।