বন্যায় রেললাইনে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প সেপ্টেম্বরে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইন’ এর ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি চলমান কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামকক্সবাজার থেকে রেল লাইনে যাওয়ার পথ এখনো পানিতে ডুবে আছে। প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা গতকাল পর্যন্ত রেল লাইনের কি অবস্থা তা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পারেনি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বন্যার আগ পর্যন্ত দোহাজারীকক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের মধ্যে এখন ৯০ কিলোমিটারে রেল লাইন বসে গেছে। নির্মাণকাজ বাকি আছে মাত্র ১০ কিলোমিটার। একইভাবে পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি এখন ৮৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষে কক্সবাজার রুটে প্রধানমন্ত্রী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রী এবং রেলপথ সচিব। সেই লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছিলেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। কিন্তু গত ৫ দিনের একটানা ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে চলমান কাজে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নির্মাণাধীন রেল লাইনেরও কিছু কিছু জায়গায় ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার চকরিয়াপেকুয়াসহ কক্সবাজারের প্রায় অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল বিকালের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে আস্তে আস্তে কিছুটা যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে নির্মাণাধীন দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইনেরও ক্ষতি খবর পাওয়া গেছে।

সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি গতকাল আজাদীকে বলেন, নির্মাণাধীন রেলপথের বিস্তৃর্ণ অংশ পাহাড়ি ঢল ও ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে। প্রবল স্রোতে নতুন রেল লাইনে দেয়া পাথর ভেসে গেছে বলেও জানান তারা।

দোহাজারীকঙবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলছেন, একটানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের শ্রমিকরা সাইটে কাজ করতে পারছে না। কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় সাতকানিয়ালোহাগাড়া অংশে বেশ কিছু রেল লাইন পানিতে ডুবে গেছে। এই অংশের রেল লাইনের দুইএক জায়গায় কিছু বালি সরেছে বলে আমরা শুনেছি। মূল সড়ক থেকে রেল লাইনে যাওয়ার পথ এখনো পানিতে ডুবে আছে।

তিনি বলেন, আমরা রেললাইনের প্রতি কিলোমিটারে দুটির বেশি কালভার্ট রেখেছি। এর বাইরে বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ৩৯টি। চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কে পানি ওঠে, এটা নতুন কিছু না। বেশির ভাগ জায়গায় পানি উঠেছে পূর্ব দিকে, আমার রেললাইন তো পশ্চিম দিকে। এবার ভারী বর্ষণের সাথে ব্যাপক হারে পাহাড়ি ঢল নেমেছে।

দোহাজারিকঙবাজার রেললাইন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবার রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণেই এমন ভয়াবহ বন্যা। রেললাইনের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, এটা বলা যাবে না। চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কে পানি ওঠে, এটা নতুন কিছু না। বেশির ভাগ জায়গায় পানি উঠেছে পূর্ব দিকে, আর রেল লাইন গেছে পশ্চিম দিকে।

প্রকল্পের প্রথম দিকে রেললাইনের প্রতি কিলোমিটারে দুটি করে কালভার্ট রাখা হয়েছিল। এই হিসাবে ২০০টি কালভার্ট। আরো বিভিন্ন দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত দুই বছরে ৪৫টি অতিরিক্ত কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এখন রেল লাইন জুড়ে মোট ২৪৫টি কালভার্ট আছে। এছাড়া রেললাইনে সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ডলু, ঈদগাঁও ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৬ টি বড় রেল সেতু। এ ছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৯টি ছোটবড় সেতু এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং।

১০০ কিলোমিটার রেলপথে কঙবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট স্টেশন থাকছে ৯টি। বাকি আট স্টেশন হলোদোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ ও রামু। এসব স্টেশনের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার। রামু, সাতকানিয়া ও কঙবাজার লিংক রোডে নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারও হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ি ঢলে ভেঙেছে সড়ক পারাপারে দুর্ভোগ