চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যায় ভেসে গেছে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এখনও পানির নিচে ডুবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ সবজি ক্ষেত। বালি ও পলি জমে জমিগুলো চাষের উপযোগিতা ফিরে পেতেও সময় লাগবে দীর্ঘদিন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে এবারের বন্যায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।
জানা যায়, বন্যায় উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে। তবে দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি, বৈলতলী, বরমা, বরকল ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন। তিনি জানান, বন্যায় চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চলে যেসব সবজি, আউশ ও আমন ক্ষেত ছিল সিংহভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে ১০৪০ হেক্টর সবজি, ১২০০ হেক্টর আউশ, ৪৫০ হেক্টর আমনের বীজতলা এবং ১৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত ছিল। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চিরিংঘাটা এলাকার কৃষক ইউপি সদস্য আশরাফ ভুইয়া জানান, তিনি ১২০ শতক পরিমাণ জায়গায় পেঁপের বাগান করেছিলেন। প্রতিটি গাছে প্রচুর পেঁপে ধরেছে। বিক্রিও করেছেন কয়েকবার। বাগানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বর্তমান তার সবগুলো পেঁপে গাছ মরে গেছে। বাগানটি করতে তার ৪ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। অথচ উক্ত বাগান থেকে তিনি ১ লাখ টাকার পেঁপেও বিক্রি করতে পারেননি।
শঙ্খচরের কৃষক উত্তর কালিয়াইশ গ্রামের আবু বক্কর জানান, শঙ্খচরে খাজনায় নেয়া ২ কানি জমিতে সদ্য মুলার চাষ করেছেন তিনি। মুলা গাছও গজিয়ে উঠেছিল। বর্তমানে তার পুরো মুলা ক্ষেতের উপর ১০ ফুট উচ্চতায় বালি ও পলি পড়ে গেছে। সামনের কয়েক বছর ওই ক্ষেতে আর কোনো ধরনের সবজি চাষ করাও সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি। কৃষক মোহাম্মদ হাসান জানান, বন্যাসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা কৃষকরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হই। ধার–দেনা করে ফসল ফলাই। অনেক সময় লাভবান হই, আবার অনেক সময় অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হই। আমরা একবার ক্ষতির সম্মুখীন হলে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থও থাকে না। অথচ সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহায়তাটুকু পায়নি।
উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন, ভয়াবহ এই বন্যায় কৃষিক্ষেত্রে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের বেগ পেতে হবে। তিনি অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা ও প্রনোদনা প্রদানের আহ্বান জানান।