চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল। এই বিলে রোপণকৃত ১৭৫০ হেক্টর আমন চারার মধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় ৩০ শতাংশ ক্ষতি হয় এবং বাকি ২০ শতাংশ জমির আংশিক ক্ষতি হয়। এতে কৃষকদের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কৃষকদের। তবে বন্যার এই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গুমাইবিলের হাজার হাজার কৃষক। বন্যায় রোপণকৃত আমন ক্ষেত নষ্টের পর এখন আবারও জমি প্রস্তুত করে আমন চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহত্তর এই গুমাইবিলে এবার ৩৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। বন্যার পূর্বে কৃষকরা তীব্র খরার কারণে বৃষ্টির পানি না পেয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে সেচ দিয়ে বিলের ৫০ শতাংশ জমিতে আমন আবাদ করে। কিন্তু টানা ১০ দিনের ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে এই আবাদ ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানি নেমে গেলে গুমাই বিলে রোপিত ধানের চারার মধ্যে ৩০ শতাংশ জমির চাষাবাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং আংশিক ক্ষতি হয় বাকি ২০ শতাংশ জমির আবাদ। এই ২০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান ৫১ আবাদ হওয়ায় সম্পূর্ণ জমির ধান নষ্ট হয়নি। বন্যার এই ক্ষতির পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে কৃষকরা। বর্তমানে গুমাইবিলে আবাদের লক্ষমাত্রার প্রায় শতভাগ জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে কৃষকরা নতুন করে আমন ধান লাগিয়েছেন। আবার অনেক কৃষক যখন বন্যায় আক্রান্ত হয় তখন নতুন করে বীজতলা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে নতুন জমিতে এবং নষ্ট হওয়া জমিতে ওই চারা দিয়ে আমন আবাদ করেছেন। এক্ষেত্রে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন এবং কৃষকদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
গুমাই বিলের কৃষক মো. মোকাররম বলেন, যদি সরকারি কোনো আর্থিক সহযোগিতা পেতাম আমাদের জন্য অনেক উপকার হত। এবার আমি ৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছি। তারমধ্যে চার হেক্টর জমি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবারও চারা লাগিয়েছি। গুমাইবিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, সময়মতো বৃষ্টির দেখা না মেলায় অনেক কৃষক সেচ পাম্প দিয়ে আমন চারা লাগিয়েছিল। এরপর বন্যা শুরু হলে অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়ে।ে তবে বন্যা চলাকালীনই কৃষকদের দিয়ে আবারও বীজতলা তৈরি করিয়েছি। এতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকট হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, চলতি আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে কৃষকরা চাষাবাদ থেকে যাতে লাভবান হতে পারেন সেজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।