ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, শৈত্য প্রবাহ, তাপপ্রবাহ বছর জুড়ে লেগেই থাকে। এবার ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১১ টি জেলা।
২৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার ৯,৪৪,৫৪৮ পরিবারের ৪৯,৩৮, ১৫৯ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছেন অন্তত ১৮ জন।
পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে মানুষ, গবাদি পশু, নষ্ট হয়েছে বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেত। বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পানিবন্দি হয়েছে অর্ধ কোটি মানুষ। প্লাবিত হয়েছে গ্রাম থেকে শহর। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকের আশ্রয় প্রদানের জন্য ৩,৫২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এতে কমপক্ষে ২,৮৪,৮৮৮ জন মানুষ, ২১,৬৯৫ টি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে। নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, ছাত্র প্রতিনিধিগণ, বিজিবি, সাধারণ জনগণ সকলেই জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম হলো বাংলাদেশ। পৃথিবীর সর্বদক্ষিণের নিম্নভূমিতে অবস্থান বলে বাংলাদেশে দুর্যোগের মাত্রা যেমন অধিকতর, তেমনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি। বন্যা,ঝড়,জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন ও সম্পদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়। এর মাঝে সর্বাধিক ক্ষতি এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে নারী ও শিশু। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৫০–৫৫ শতাংশই হচ্ছে নারী ও শিশু। ফলে বন্যাসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের উপকূলবর্তী এলাকা, দ্বীপ, হাওড়–বাওড়, চর, পাহাড়িঅঞ্চল এবং শহরের বস্তি এলাকার অধিকাংশ নারী ও শিশু ক্ষতির মুখে পড়ে। অবশ্য বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে মানুষের জীবন রক্ষায় দেশের সমুদ্র উপকূলের জেলা–উপজেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের আগাম সকর্ত বার্তা পেলেই নারী, শিশু ও অন্যান্যদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখার জন্যে নেওয়া হয়। কিন্তু এবার আকস্মিক বন্যায়, আগাম প্রস্তুতি না থাকার কারণে অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে নারী ও শিশু সহ সকলকেই।
চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। যতদূর দেখা যায় শুধু পানি আর পানি চোখে পড়ে। কোথাও অথৈ পানি, কোথাও বুক পানি, কোথাও গলা সমান পানি, কোথাও তারও বেশি, কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু পানি। কয়েকদিনের বন্যায় তলিয়ে গেছে ঘর–বাড়ি, টিউবয়েল, শৌচাগার। তলিয়ে গেছে সব। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সাইক্লোন সেল্টারে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের দালান বাড়িতে কিংবা অর্ধ নির্মিত বাড়িতে। বিভিন্ন স্কুল দালান গুলোকেও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে পরিবারগুলোকে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অভ্যন্তরের পরিস্থিতি খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে অতিরিক্ত ভিড়, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় আলোর অভাব, নারী ও শিশুদের জন্য অপর্যাপ্ত নিরাপদ স্থানের পাশাপাশি পানি সরবরাহ ও পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা না থাকায় মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে আশ্রয় প্রার্থীদের। একদিকে যেমন স্যানিটেশন সমস্যা অন্যদিকে শিশুদের নিরাপদ স্থান ও পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করতে না পারা এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, সুযোগ সুবিধার অভাবে গোসল করাতে না পারা সহ অস্বাস্থ্যকর নোংরা পানির প্রভাবে বিভিন্ন রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা। শিশুদের পাশাপাশি নারীরাও পড়েছেন বিপাকে। নারী ও পুরুষ এক টয়লেট ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতেও ভুগেছেন নারীরা। তরুণীদের অনেকেই স্যানিটারি ন্যাপকিন সংকটে পড়েছেন। তাই ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়েছে। যাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার ভয় রয়েছে। শুধু আশ্রয়কেন্দ্রেই নয়, সর্বত্র বন্যার কারণে পরিবারের নারী ও তরুণীরা শৌচকর্ম সারা নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। শৌচাগারগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাতের আঁধার নামার অপেক্ষায় থাকতে হয় নারীদের। বন্যার পানিতে গোসল ও শৌচকর্ম সারায় স্বাস্থ্যগত সমস্যার ভয়ে রয়েছে তারা।
বন্যার সময় জনস্বাস্থ্য নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হতে পারে। প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায় অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। পরোক্ষভাবে হলো–খাবারের ঘাটতি, দূষিত পানি পান ইত্যাদির কারণে পানিবাহিত রোগ ছড়ানো, এ ছাড়া সাপের কামড়ে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যত্যয় ঘটে। এ সময় গর্ভকালীন মহিলাদের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। যেমন একটু সমস্যা হলেই তাদের গর্ভস্থ সন্তানের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ডেলিভারির সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এই সময়ে দেশের অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পানিতে ডুবে যায়। ফলে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কঠিন হয়ে পড়ে।
এবার বন্যায় তেমনি কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে র্যাব, সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনগণ এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা মিলে সাহায্যের হাত বাগিয়ে দিয়ে নারী ও শিশুদেরকে কঠিন বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। নোয়াখালীতে বন্যার পানিতে কয়েক দিন নিমজ্জিত থাকা অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। অন্যদিকে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া নাজমুল নামের দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হেলিকপ্টারের সাহায্যে বিজিবি ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান, পরবর্তীতে সে আশঙ্কা মুক্ত হয়। ভয়াবহ বন্যায় আটকে পড়া ফেনী জেলার ফুলগাজী থানার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে র্যাবের হেলিকপ্টার এর মাধ্যমে তিন নারীকে উদ্ধার করা হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন দুজন অসুস্থ এবং একজন গর্ভবতী নারী। পরে কুমিল্লা সিএমএইসে নেওয়া হলে ওই সন্তানসম্ভবা নারী ফুটফুটে শিশুর জন্ম দেন। বন্যায় ডুবে যাওয়া জনপদ থেকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা অন্য এক অন্তঃসত্ত্বা নারী জন্ম দিলেন ফুটফুটে সন্তানের। ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার আতাতুর্ক সরকারি মডেল হাইস্কুল আশ্রয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নেওয়া এবং পরবর্তীতে পুনরায় আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা সবকিছুতেই সাহায্য করেছে এলাকাবাসী এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা।
এবারের বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় জনগণকে উদ্ধার করা সহ ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে সারা দেশের সকল জনগণ। একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের জন্য কাজ করেছে সকলেই। পরবর্তীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতেই বাড়ছে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট। ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করলে অতি সহজেই দেশ এই সংকট থেকে মুক্তি পাবে এমনটা আশা করাই যায়। বন্যার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও মেডিকেল টিম সহায়তা প্রদানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় পয়োনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র পানির সাথে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে। ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ঘটে। বন্যা কবলিত এলাকায় পানির পয়েন্ট এবং স্যানিটেশন সুবিধা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা অণুজীব, পয়োনিষ্কাশন, কৃষি বা শিল্প বর্জ্য, রাসায়নিক এবং অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশে স্বাভাবিক পানির উৎসগুলোতে দূষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেক জায়গা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করার ফলে মানুষ ডায়রিয়া ও চর্মরোগের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছে। অস্বাভাবিক বন্যার চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব সব মানুষের জীবন ও জীবিকায় পড়ছে আর তার খেসারত গুনতে হচ্ছে প্রধানত নারী ও শিশুদের। উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। খাবার পানির সঙ্গে যে পরিমাণ লবণ নারীদের দেহে প্রবেশ করছে তার প্রভাবে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দৈনন্দিন মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে জরায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা। বয়সভেদে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব পড়ে। পরিবারের গৃহস্থালি কাজের জন্য এবং প্রতিদিন দূরের পাহাড়ি ছড়া থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পাহাড়ি জনপদে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় নারী ও কন্যাশিশুদেরকে। উঁচু–নিচু পথ বেয়ে প্রতিদিন পানি সংগ্রহের কারণে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। হঠাৎ বন্যায় এ অঞ্চলের নারী শিশুদের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে।
নিয়ম মেনে চলে অতি দ্রুতই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। বন্যার পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা, সেজন্য মায়েদের সতর্ক করতে হবে এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিতে হবে। বন্যার সময় যেসব মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করে, তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনীমূলক পদ্ধতি রয়েছে। যেমন–বাঁশ দিয়ে খাঁচার মতো করে বানিয়ে সেখানে বাচ্চাকে রাখা। এটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হলেও ভালো কাজ করে। এই খাঁচাটি মায়ের কাছাকাছি রাখতে হবে, যেনো মা বাচ্চাকে দেখতে পায়।
বন্যার সময় সাপে কাটলে বিষটাকে নিষ্ক্রিয় করতে অ্যান্টিভেনম ওষুধ দিতে হবে। এগুলো বন্যা উপদ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে মজুদ রাখতে হবে। সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে গেলে তারা কি ব্যবস্থা নিবে, সেজন্য ডাক্তার এবং নার্সদের গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে এবং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি টিম গঠন করতে হবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন টিমে যারা থাকবেন, তাদের এসব বিষয় খেয়াল রাখতে বে, তদারকি করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বন্যা পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া, কলেরা ও চুলকানিসহ ইত্যাদি পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই এ–বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিতে হবে। তুলনামূলক কম উপদ্রুত এলাকা থেকে উপদ্রুত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া বড় বড় ট্যাংক বিভিন্ন উঁচু স্থানে রেখে সেখানে লড়ির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। বর্তমানে ৪০ লিটারের পানির জার পাওয়া যায়। এগুলো বন্যা কবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পৌঁছালে, ওই এলাকায় পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা হবে। এছাড়াও হাজার লিটার ক্যাপাসিটির ওয়াটার পিউরিফায়ার স্থাপন করা যায়। এতে বিনামূল্যে এলাকাবাসী সুপেয় পানি পাবে এতে ডায়রিয়া আক্রান্তের ঝুঁকিটা কমে যাবে।
বন্যা পরবর্তীতে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পায়খানা করার সাথে সাথে মলমূত্র পানিতে সহজে মিশে যায়। এক্ষেত্রে যদি কারও কলেরা থাকে তবে সাথে সাথে পানিটা দূষিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি যতো কমবে কলেরার ঘনত্ব ততো বাড়বে, তখন কলেরা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। তাই এ সময় মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা দিতে হবে। এক দিনে ১০–২০ লাখ মানুষকে কলেরার টিকা খাওয়ানো সম্ভব। শুরুতে প্রথম ডোজ খাওয়ার এক মাস পর দুই ডোজ টিকা খাওয়ালে বন্যা পরবর্তী কলেরা বা ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যেসব খাবার সহজে নষ্ট হয় না তেমন শুকনো খাবার দিতে হবে। যদি শিশুদের খাদ্য ঘাটতি ঘটে, তাহলে তারা অপুষ্টিতে ভুগে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ বিষয়গুলো চিন্তা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সব ধরনের ঝুঁকির কথা মাথায় নিয়েই সুরক্ষা দেওয়ার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ বা কমিয়ে আনা আমাদের হাতে নেই তাই মোকাবেলা এবং এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে আমাদের। নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও সচেতন করতে হবে। নদীগুলোর গভীরতা বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। আমাদের শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে। বৃষ্টির পানি নিরাপদে সংগ্রহে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বন্যায় ও খরায় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা থাকে। বছরের যেসময় বন্যা হয়, সেসময় ঘরে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যথেষ্ট স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে, যেনো তারা শিশুসহ অন্যান্য বিষয়ে নজর রাখতে পারেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানে পাহাড় কাটাসহ সারাদেশে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। ছোট–বড় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সচেতনতা প্রয়োজন। তবেই নিরাপদ হবে আমাদের জীবন। সুস্থ থাকবে আমাদের নারী ও শিশুরা।