বন্যায় চট্টগ্রামে ৮৪৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

২২৬টি পাঠদানের অনুপযোগী

ইমাম ইমু | সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ভবন, আসবাব ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে গেলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার উপযোগী নয়। ক্লাস শুরু হতে আরও এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া অনেক জায়গায় এখনো জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাট ক্ষয়ক্ষতিসহ নানা সমস্যার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফটিকছড়ি, মীরসরাই ও রাউজানসহ কয়েকটি উপজেলায়। এসব উপজেলায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে বহুতল ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোতে বহুতল ভবনের নিচতলায় পানি উঠায় ব্যবহার অনুপযোগী ছিল।

গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য মতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ কোটি (২৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টাকা) টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬১৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। বাকি ২২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান অনুপযোগী হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম ক্লাস চালু করা এখন সম্ভব নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডিসিপ্লিন বাংলাদেশ’ এর সদস্য মো. রাসেল ত্রাণ দেওয়ার কাজে ঘুরেছেন চট্টগ্রামের বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো। মো. রাসেল আজাদীকে বলেন, ফটিকছড়ি, মীরসরাইয়ে বেশ কিছু মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হলেও টিনশিট ও নিম্নমানের অবকাঠামোর প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষত সারিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

জানা যায়, ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে প্রায় ৬শ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষি খাতে। ক্ষতি হয়েছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফটিকছড়িতেও ৫শ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা খাতে। নষ্ট হয়েছে অনেক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ। হাটহাজারীতে ক্ষতি হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকার অধিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতি হয়েছে ২৬টি, এর মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ৭টি এবং ২টি করে কলেজ ও মাদ্রাসা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাউজান উপজেলায়। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায়ও কমবেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা খাতে।

চট্টগ্রাম ছাড়াও পাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে প্রায় ১ হাজার ২০৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা। মাউশি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৬৫টিতে এখনই ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না।

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশা করি সরকার এই ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিবে।

বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মীরসরাইয়ের বামনসুন্দর দারোগাহাটের তালীমুল কোরআন মাদ্রাসা। টিনশিট মাদ্রাসাটির প্রায় অর্ধ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মেরামতের অভাবে এখনো প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হয়নি। মাদ্রাসাটির প্রধান শিক্ষক ইউনুছ মিয়া আজাদীকে বলেন, খালের পাশে হওয়ায় পানিতে মাদ্রাসার বেড়া ভেসে গেছে। গত দুই সপ্তাহ পাঠদান কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। এখনো কোনো অনুদান পাইনি। জানি না কখন শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে পারি।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন আজাদীকে বলেন, মীরসরাইয়ে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান এখনো শুরু হয়নি। এর মধ্যে কিছু স্কুলের সড়ক ভেঙে গেছে কিছু জায়গায় স্কুলের নিচতলা থেকে পানি এখনো সরেনি। প্রাথমিকভাবে পাঠদান উপযোগী করার কাজ চলছে। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝাঁজ কমছে পেঁয়াজের
পরবর্তী নিবন্ধজনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে : তারেক