বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছে নেতৃবৃন্দ। নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, এ দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। সাধারণ মানুষের দেওয়া সহযোগিতার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। তবে আশাবাদী এ কারণে যে, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, বন্যাকবলিতদের জন্য মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসছে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। চারিদিকে ফুটে ওঠেছে মানবিক বাংলাদেশের চিত্র। দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে দেশের সব মানুষ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এখনো বন্যার্তদের জন্য কাজ করছে। আমরা কথা দিচ্ছি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। তবে এর জন্য সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না। ২৬ আগস্ট বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সোনার বাংলা কলেজ মাঠে এ কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাকবলিতদের খোঁজখবর নেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পানি কমে যাবে, তবে এরপর নানামুখী সমস্যা দেখা দেবে। বিশেষ করে কৃষিতে। অনেক ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। শাকসবজি শেষ। ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পর আমরা উর্বর মাটি পাব। সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমরা বিকল্প স্থানে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছি। সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকবেই, কিন্তু আমাদেরকে সাহস মনোবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। দুর্গত এলাকায় ডাকাতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন কাজ করবে, তেমনি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে এসে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে জানিয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি নৌ যান নিয়ে কাজ করছে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সরকারি সব বিভাগ। বন্যা পরবর্তী সময়ের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। গোমতীর ভাঙন কবলিত বাঁধ প্রতিরক্ষায় সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলা হবে। কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে মনে হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. মো. ফখরুল ইসলাম তাঁর এক লেখায় বলেছেন, দুর্নীতির পর দুর্যোগ আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে। প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের আয়বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং ধনী–দরিদ্রের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে। দুর্যোগের পর ত্রাণ চুরির মহোৎসব আমাদের সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য সৃষ্টির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই এদিকটিতে সতর্ক হওয়া জরুরি। ঘরহারা বন্যার্তদের ত্রাণ নয়; সেনাবাহিনীর মাধ্যমে গৃহনির্মাণসামগ্রী কিনে অথবা ঘর তুলে দিন। ফসলহারা প্রান্তিক কৃষকদের বাঁচাতে ঋণ মওকুফ করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দান করুন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী বিনামূল্যে চিকিৎসা, বইপুস্তক, পুষ্টিকর শিশু খাদ্য প্রদান করুন। উপদ্রুত এলাকায় বন্যার পানি না সরতেই দেশে করোনার চতুর্থ ধাপের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ডায়রিয়া, কলেরা ও অন্যান্য অসুখের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সব ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে আশু তৎপরতা জোরদার করুন। এ দুঃসময়ে বন্যার্তদের জন্য প্রাণ খুলে সাহায্যের হাত প্রসারিত করা সবার নৈতিক দায়িত্ব বটে।
বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের এখন বন্যা–পরবর্তী পুনর্বাসন কাজে মনোযোগ দিতে হবে। অনেকে সম্পদ হারিয়েছে, অনেকে বাড়িঘর হারিয়েছে, ফসলহানি ঘটেছে, আরও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। যদিও আমাদের বাংলাদেশের দুর্যোগ–পরবর্তী ত্রাণ ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। তারপরও আমরা দেখেছি, সারা দেশ থেকে মানুষ বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কীভাবে এগিয়ে এসেছে। জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য দেখতে পেয়েছি আমরা। আমরা আশা করি সরকার অতি দ্রুত তার পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করবে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা আবার নতুন করে তাদের জীবন শুরু করতে পারবে।