সম্প্রতি দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গুলি ও ফাঁদ পেতে একের পর এক বন্যহাতি হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল। পাশাপাশি হাতির হোমরেঞ্জ কেন ও কীভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং হাতি-মানুষ সংঘাত নিরসনসহ বন্যহাতি রক্ষায় করণীয় কী তা নির্ধারণে স্থানীয়দের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করে বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন।
সভায় বক্তারা বলেন, বন্যহাতি হোমরেঞ্জ ফিরিয়ে দিতে গেলে বর্তমানে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে যেসব অবৈধ বসতি ও ইটভাটা গড়ে উঠেছে সেসব উচ্ছেদ করতে হবে। একইসাথে বন্যহাতির আবাসস্থল শনাক্ত করে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য, নিরাপত্তা ও প্রজননের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল সভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়ার ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। স্বাগত বক্তব্য দেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তহিদুল ইসলাম। বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ও বনবিভাগের সিএমসি কমিটির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম আর মাহমুদ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, ফাঁসিয়াখালী ও ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী।
সভায় প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম আর মাহমুদ বলেন, গত কয়েকবছরে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর উচিতার বিলসহ রেঞ্জের পাঁচ বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে উজাড় করে জবরদখল করা হয়েছে। হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা ও হাজারো অবৈধ বসতি। আর এসব বসতি বিদ্যুৎ সংযোগও পাচ্ছে। এসব কারণে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাতি ও মানুষ একে অপরকে বাঁচাতে সংঘাতে জড়াচ্ছে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হাতির আবাসস্থল ফিরিয়ে দিতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে বনের ভেতর গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটা ও বসতিগুলো।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সংরক্ষিত বন, খাল সব দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ ভালো নেই। রাষ্ট্র ও পরিবেশের প্রয়োজনে সরকারি সম্পদ রক্ষা করতে হবে। সংরক্ষিত বনভূমি দখলে নিয়ে যতই পাকা দালান বা বসতি গড়ে তোলা হউক না কেন, তা সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে। তাই বনবিভাগ যখনই সহযোগিতা চাইবে তখনই সহায়তা দেওয়া হবে। আর সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
হাতির আক্রমণে গত কয়েক বছরে পাহাড়ে ২৮০ জন মারা যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের মধ্যে আদিকাল থেকেই বসবাস করে আসছেন পাহাড়িরা। যেখানে বন্য হাতিরও বসবাস। কিন্তু গেল কয়েক বছরে হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২৮০ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন পাহাড়ি মারা গেছেন। বাকি ২৭৬ জন মারা গেছেন বাঙালি। ডিএফও আরো বলেন, পাহাড়িরা জানেন হাতির আবাসস্থল কোথায় এবং তারা কোন পথ দিয়ে চলাচল করে থাকে। এজন্য পাহাড়ি লোকজন মারা যাওয়ার সংখ্যা একেবারেই নগন্য। সেই জায়গায় সংরক্ষিত বনভূমি দখল এবং হাতির আবাসস্থল ও চলাচলপথ দখল করে বসতি স্থাপনকারী বাঙালি লোকজনের মৃতের সংখ্যা বেশি।