বন্ধ ১২ বেসরকারি ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট পুনরায় খোলার উদ্যোগ

৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন ডিজেল রিচ কনডেনসেট আমদানির প্রস্তাব জনবল ছাঁটাই রোধ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ জুন, ২০২১ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

গত এক বছর ধরে বন্ধ থাকা দেশের ১২টি বেসরকারি ফ্রাকশনেশন প্লান্ট নতুন করে খোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্লান্টগুলো থেকে কিভাবে মানসম্মত জ্বালানি উৎপাদন করা যাবে সে বিষয়ে মতামতের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানিকৃত ডিজেল রিচ কনডেনসেট ব্যবহার করলে প্লান্টগুলো থেকে মানসম্মত ডিজেল পাওয়া সম্ভব হবে। এতে পরিশোধিত ডিজেল আমদানি কমার পাশাপাশি প্লান্টগুলো চালু হলে বেকার হওয়া কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ানরা চাকরি ফিরে পাবে। অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও নিরাপদ হবে। পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিআরএবি) সভাপতি মো. মামুন সালাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সরকারি অনুমোদন নিয়েই আমরা ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলো করেছিলাম। এখানে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংক লোন রয়েছে। অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। গত বছর হঠাৎ প্লান্টগুলো বন্ধ করে দেয় বিপিসি। এতে অনেকগুলো লোক বেকার হয়ে পড়ে। এরপর আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে লিখেছিলাম, প্লান্টগুলো চালুর দাবি দিয়েছিলাম। এখন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ইতিবাচক। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি হয়েছে। কমিটি নিশ্চয়ই ভাল কিছু নির্দেশনা দেবে। কনডেনসেট আমদানির মাধ্যমে প্লান্টগুলো চালু হলে বেকার মানুষগুলো তাদের কাজ ফিরে পাবে। আমরাও মান অনুযায়ী প্রোডাক্ট বিপিসিকে সরবরাহ করতে পারবো।’
সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ফ্রাকশনেশন প্লান্টগুলোতে গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া উপজাত কনডেনসেট পরিশোধন করে জ্বালানি উৎপাদন করা হতো। এসব প্লান্ট থেকে পাওয়া পেট্রোল দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো হতো। অন্যদিকে ডিজেলও পাওয়া যেতো। কিন্তু প্লান্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনবল ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়ে প্লান্টগুলো।
জানা যায়, বেসরকারি ১৪টি এবং সরকারি ৭টি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট থেকে সরবরাহকৃত কনডেনসেটের বিপরীতে অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিন নিত বিপিসি। দেশের চাহিদার সব পেট্রল সংগ্রহ করা হতো এই ২১ প্লান্ট থেকেই। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে বেশিরভাগ কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট বিএসটিআই এর মান অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ দিতে না পারায় গত বছরের ২৬ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পেট্রল উৎপাদনকারী ১২ নন সিআরইউ প্লান্টকে কনডেনসেট বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সেই ১২ প্লান্টকে কনডেনসেট বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় বিপিসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সুপার রিফাইনারি লিমিটেড, অ্যাকোয়া মিনারেল টারপেনটাইন অ্যান্ড সলভেন্টস প্লান্টস লিমিটেড, পিএইচপি পেট্রো রিফাইনারি লি., সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্টস (প্রা.) লি., জেবি রিফাইনারি লি., ইউনিভার্সেল রিফাইনারি (প্রা.) লি., রূপসা ট্যাংক টার্মিনালস এন্ড রিফাইনারি লি., সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লি., লার্ক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লি., গোল্ডেন কনডেনসেট অয়েল রিফাইনারি ফ্যাক্টরি লি., চৌধুরী রিফাইনারি লি. এবং কার্বন হোল্ডিংস লিমিটেড। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্লান্টগুলো থেকে জ্বালানি নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় দেশীয় চাহিদা মেটাতে নতুন করে পেট্রোল আমদানি শুরু করে বিপিসি।
এদিকে ফ্রাকশনেশন প্লান্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার শুরু করে প্লান্ট মালিকদের সংগঠন পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিআরএবি)। সংগঠনটির দাবির প্রেক্ষিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত ১১ এপ্রিল এক ভার্চুয়াল মিটিং আহবান করে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই ভার্চুয়াল সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব প্লান্টগুলোর বিষয়ে মতামতের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়টি পর্যালোচনার পরামর্শ দেন। এরপর কমিটির সভাপতি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হাকিম জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন)কে আহবায়ক করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটিকে সরকারি, বেসরকারি, সিআরইউ, নন-সিআরইউ প্লান্ট এবং রিফাইনারিগুলোর সাথে আলোচনা ও মতামত গ্রহণের কথা বলা হয়। কমিটি গঠনের এক মাসের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কমিটিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (অপারেশন), পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক, বিপিসির একজন পরিচালক, পেট্রোবাংলা, ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড থেকে একজন করে মহাব্যবস্থাপক রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, কমিটি ইতোমধ্যে একটি মিটিংও করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্লান্টগুলো আমদানিকৃত ডিজেল রিচ কনডেনসেট দিয়ে চালু করা গেলে একদিকে দেশের পরিশোধিত ডিজেল আমদানি কমবে। তাছাড়া প্লান্টগুলো থেকে উৎপাদিত ডিজেলও আমদানিমূল্য অপেক্ষা কম দামে কেনা সম্ভব হবে। এতে বিপিসি দুইদিকেই লাভবান হবে। অন্যদিকে প্লান্টগুলো চালু হলে নতুন করে বেকারত্ব তৈরি হবে না। দেশের সম্পদেরও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হবে।’
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে উৎপাদিত দেশিয় কনডেনসেট ফ্রাকশনেশন প্লান্টগুলোকে দেয়া যাচ্ছিল না। এখন কনডেনসেট আমদানি করে প্লান্টগুলোকে সরবরাহ দেয়া হবে। বিপিসিকেই এসব কনডেনসেট আমদানির দায়িত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির আহবায়ক জ্বালানি ও খনিক সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মো. আবুল মনসুর রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কমিটি কাজ করছে। আমরা নির্ধারিত সময়ে এ বিষয়ে মতামত দিয়ে প্রতিবেদন দেবো।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেইলরের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হেলপারের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমসে ফেব্রিক্স কেমিক্যালসহ ৪৬ লট পণ্যের নিলাম আজ